Homeদেশের গণমাধ্যমেবাদী জানেন না আসামি কে, কী বলছে প্রশাসন?

বাদী জানেন না আসামি কে, কী বলছে প্রশাসন?


ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৭ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত যত হত্যা মামলা হয়েছে তার মধ্যে বেশ কিছুতে দেখা গেছে সমন্বয়হীনতা। একই হত্যার ঘটনায় একাধিক মামলা যেমন হয়েছে, তেমনি বাদী না চাইতেও বাড়ছে আসামির সংখ্যা। এসব মামলায় আসামি গ্রেফতারের নামে হয়রানির অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। বাদীর অগোচরে নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এসব মামলা।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তদন্তের আগে কাউকে হয়রানি করা হবে না। এছাড়া যাচাই-বাছাই করে মামলা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবু মামলায় দেখা যাচ্ছে এমন সমন্বয়হীনতা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় মামলা করার অধিকার সাধারণ মানুষের আছে। তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শত্রুতার জেরে এসব মামলায় কাউকে ফাঁসানো বা হয়রানির উদ্দেশ্যে আসামি করা হলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত দাবি এবং তাদের নেতাদের আটকের ঘটনায় আইনি লড়াইয়ে সম্পৃক্ত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্না। অথচ তাকেই একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। সেই মামলার বাদী মোহাম্মদ বাকের (৫২) আসামিকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন। বাকের বনশ্রী এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন। গত ১৭ অক্টোবর তিনি তার ছেলে আহাদুল ইসলামকে (২৫) গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন। বাকের জানান, তিনি জেড আই খান পান্নাকে চেনেন না এবং কীভাবে তার নাম আসামির তালিকায় এসেছে সেটাও জানেন না। পরে এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। এরপর বাদী থানায় আবেদন করে জানান ওই মামলায় এই আইনজীবীর নাম ভুলবশত এসেছে, তাকে যেন অব্যাহতি দেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট রাজধানীর জিগাতলা মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মনেশ্বর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মোতালিব (১৪)। এ ঘটনায় গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মোতালিবের বাবা আব্দুল মতিন। একই ঘটনায় গত ৩০ আগস্ট আদালতের নির্দেশে আরেকটি হত্যা মামলা নেয় ডিএমপির হাজারীবাগ থানা পুলিশ। ওই মামলার বাদী শেখ মুহা. মাছুম বিল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। মাছুম বিল্লাহ ভিকটিমের নাম উল্লেখ করেন আব্দুল মোতালেব মুন্না। তার বয়স উল্লেখ করেন ১২ বছর। বাদীর সঙ্গে ভিকটিমের কোনও সম্পর্ক নেই। শিক্ষার্থী মোতালিবের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায়। আর মাছুম বিল্লাহর বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুরে।

আব্দুল মতিন এজাহারে ১৭৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করেন। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে মাছুম বিল্লাহ যে অভিযোগ দিয়েছেন সেখানে আসামি করেছেন ২০ জনকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের কারও বাসা ওই এলাকায় নয়, আবার অধিকাংশই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাজারীবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে আমরা মামলাটি নিয়েছিলাম। এ ঘটনায় আগে মামলা হয়েছে জানতাম না। আমরা ভিকটিমের বাবাকে ডেকেছি, তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও ওই মামলা সম্পর্কে আগে থেকে কিছু জানতেন না। মামলার বাদী মাছুম বিল্লাহকেও তিনি চেনেন না।’

ওসি আরও বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে, মামলা একটিই হবে। নিহত শিক্ষার্থীর বাবা ধানমন্ডি থানায় যে মামলাটি দায়ের করেছেন এটিতে হাজারীবাগ থানায় দায়ের করা মামলার আসামিদের যুক্ত করা হবে। তারপর কে দোষী আর কে নির্দোষ সেটি আদালত বিচার করবেন। আদালতে যদি কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে মামলার তালিকা থেকে তার নাম বাদ যাবে।’

এমন উদাহরণ আরও আছে। যেমন- ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক এলাকায় গত ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত হয় মিরাজুল ইসলাম (২১)। পরে গত ২৮ আগস্ট রাজধানী যাত্রাবাড়ী থানায় এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। নিহত মিরাজ লালমনিরহাটের আদিমারী উপজেলার বারঘরিয়া এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের বাবার দায়ের করা মামলাটি যাত্রাবাড়ী থানায় হলেও সব আসামি লালমনিরহাটের বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগের নেতা। মামলায় ৪০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক সালাম নিজ জেলার এত লোককে আসামি করার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তার দাবি, আসামিরা স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই তাদের আসামি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আগেও এ বিষয়ে বলেছি, এখনও বলছি, মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করার সুযোগ নেই। তদন্ত না করে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তদন্ত কর্মকর্তা যদি তদন্ত করে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পায় তবেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি কেউ যদি ভুয়া বা হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা করেন তাহলে বাদীর বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।’

এ প্রসঙ্গে শনিবার (২৬ অক্টোবর) রংপুরে এক অনুষ্ঠানে পুলিশের আইজিপি ময়নুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলা হলেও বাণিজ্য, না হলেও বাণিজ্য। ছাড়ার জন্য বাণিজ্য, এফিডেভিটের জন্য বাণিজ্য, এমন নানান কথা আমাদের কাছে আসছে। মামলায় আমি ছিলাম না এটি এফিডেভিট করে দিক, এমনটা শুনছি বিভিন্ন জায়গায়। পুলিশের কোনও সদস্য যদি এরকম বাণিজ্য করে তাহলে আমি ব্যবস্থা নেবো। এগুলো চিহ্নিত করতে হবে। বাণিজ্য করা মানে আল্টিমেটলি ওই ব্যক্তিকে শোষণ করা, কাউকে না কাউকে শোষণ করা। এটা চলতে থাকলে শোষণবিরোধী যে আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী যে আন্দোলন, তার থিম নস্যাৎ হয়ে যাবে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত