Homeদেশের গণমাধ্যমে‘বাতিল পাসপোর্টে’ রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ যেভাবে বাড়াল ভারত

‘বাতিল পাসপোর্টে’ রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ যেভাবে বাড়াল ভারত


মানবতাবিরোধী অপরাধ, গুম-খুনের মামলায় বিচারের মুখোমুখি করতে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে চায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য দিল্লিকে কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছে ঢাকা। এরই মধ্যে ‘গুম-হত্যা’র সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করেছে সরকার। তার এক দিন যেতে না যেতেই খবর হয়েছে, ভারত সরকার তার ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। নিজ দেশে পাসপোর্ট বাতিল হওয়ার পরও কীভাবে বিদেশে শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বা আবাসিকতার মেয়াদ বেড়েছে, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে মানুষের মধ্যে।

ভারতে শরণার্থী বা রাজনৈতিক আশ্রয়-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় দেশটির ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের (এফআরআরও) সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথ প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে। অর্থাৎ তার ভারতে বসবাসের আইনি বৈধতা দিয়ে তার মেয়াদ বাড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। 

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ের সময় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পাসপোর্ট অফিস থেকে জানানো হয়েছে, যারা ‘গুম এবং হত্যার’ সঙ্গে জড়িত এবং জুলাই কিলিংসের সঙ্গে জড়িত বা জুলাই কিলিংয়ে অভিযুক্ত, এমন ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ অর্থাৎ রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ ভারতে বাড়ানো হয়েছে; যদিও ঠিক কবে এই মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেই দিন-তারিখ জানায়নি নয়াদিল্লি। এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে হিন্দুস্তান টাইমস ও মূলধারার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। 

ভারতে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কতগুলো শর্ত রয়েছে। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে সেগুলো অনুসরণ করেছে কিনা, তা ভারতের এ-সংক্রান্ত আইন দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। 

ভারতে আবাসিকতা ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আইনের ধারাগুলো এমন:

•    কোনো বিদেশি নাগরিক ভারতে ১৮০ দিনের বেশি অবস্থান করতে চাইলে তাকে ভারত সরকারের কাছ থেকে রেসিডেন্ট পারমিট নিতে হয়।

•   ভারতে প্রবেশের ১৪ দিনের মধ্যেই তাকে এই রেসিডেন্ট পারমিট পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে হয়। 

•   ওই ব্যক্তি যে শহরে অবস্থান করছেন (দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই), সেই শহরে অবস্থিত ‘ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস’ বরাবর এই আবেদন করতে হয়। 

•   ভারতে অবস্থানের সময়ে স্থানীয় বৈধ ফোন নম্বর ও ই-মেল আইডি মারফত নির্দিষ্ট ফরমেটে আবেদন করতে হয়। আবেদনের সময় পাসপোর্ট, ভিসা, নিজের চার কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ভারতে     অবস্থানের ঠিকানাসহ যাবতীয় বৈধ নথি জমা দিতে হয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ এফআরআরওর হিসাবে জমা দিতে হয়। 

•   রেসিডেন্ট পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে গেলে  ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগে নির্দিষ্ট ফরমেটে আবার আবেদন করতে হয়। সেই সঙ্গে ওই ব্যক্তির ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্যও আবেদন করা আবশ্যক। 

•   তবে ১৬ বছরের নিচে ভারতে অবস্থানরত কোনো বিদেশি নাগরিককে রেসিডেন্ট পারমিটের জন্য আবেদন করতে হয় না। এমনকি যে সব নাগরিকের ‘ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়া’ (ওসিআই) এর সচিত্র পরিচয়পত্র আছে, তাদেরও রেসিডেন্ট পারমিটের জন্য নাম নিবন্ধন করার কোনো প্রয়োজন নেই। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতোই ঠিক একইভাবে রেসিডেন্ট পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি করে দিল্লিতে খানিকটা অন্তরালেই বসবাস করছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

নাম গোপন রাখার শর্তে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কূটনীতিক বলেছেন, “পাসপোর্ট বাতিল সাধারণত দুইভাবে হয়। যেমন বাংলাদেশ শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল ঘোষণা করেছে। এখন সেই পাসপোর্ট নিয়ে তিনি চাইলেই আর বাংলাদেশে ফিরে যেতে পারবেন না। তিনি বাংলাদেশে থাকলেও এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশে যেতে পারতেন না।”

“কিন্তু বর্তমানে তিনি যেহেতু দেশের বাইরে, সেক্ষেত্রে তার পাসপোর্ট শুধু বাংলাদেশের জন্যই অগ্রহণযোগ্য। তবে ভারত বা তৃতীয় কোনো দেশের জন্য তার পাসপোর্টকে এখনো বৈধ ট্রাভেল ডকুমেন্ট হিসেবেই ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্তত আন্তর্জাতিক আইন সেই কথাই বলে। বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়টা খুব ভালোভাবেই জানে। ৫ আগস্টের পর ভারতে আশ্রয় নেওয়া এমন অনেকেরই পাসপোর্ট বাংলাদেশ সরকার আগে বাতিল ঘোষণা করেছে। তারপরও সেই পাসপোর্ট ও বৈধ ভিসার মাধ্যমে তারা তৃতীয় দেশে যাতায়াত করেছেন।” 

ওই কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “চাইলেই মেয়াদ শেষের আগে বাংলাদেশ সরকার বৈধ ট্রাভেল ডকুমেন্ট হিসেবে এই পাসপোর্ট আন্তর্জাতিকভাবে বাতিল ঘোষণা দিতে পারে না। এর জন্য একাধিক ধাপ বাংলাদেশ সরকারকে অতিক্রম করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে পাসপোর্ট বাতিলের সর্বোত্তম দ্বিতীয় এই পদ্ধতিটি বেশ জটিল।”

“এক্ষেত্রে দেশের মধ্যে পাসপোর্ট বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর নির্দিষ্ট প্রমাণসহ অপরাধীর অপরাধের প্রমাণ দিতে হয় ইন্টারপোলে। ইন্টারপোলের জটিল একাধিক ধাপ সম্পন্ন করতে হয় সংশ্লিষ্ট সরকারকে। এরপর ইন্টারপোল আন্তর্জাতিকভাবে ওই পাসপোর্ট বাতিল ঘোষণা দিয়ে চিঠি দেবে অন্যান্য দেশকে। একমাত্র তারপরেই পাসপোর্ট বাতিলের সমস্ত ধাপ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে বলা যেতে পারে। এই পদ্ধতিটি বেশ সময়সাপেক্ষ। এখন যতক্ষণ না ইন্টারপোলের নোটিশ আমাদের কাছে আসছে, আমরা ততক্ষণ এই পাসপোর্টকে বৈধ হিসেবেই বিবেচনা করব।”

হাসিনার বিরুদ্ধে এরই মধ্যেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেখ হাসিনাসহ বাকি অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজিরা করতে বলা হয়েছে। ভারতে এসে হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টিও তাদের বিবেচনাধীন রয়েছে। 

৫ অগাস্ট দিল্লির হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর থেকে শেখ হাসিনার সঙ্গে বাইরের কারো যোগাযোগ করার সুযোগ নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়েছে। তাকে এখন দিল্লির একটি ‘সেফ হাউজে’ রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দমন করতে গিয়ে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। 

বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিকে একটি কূটনৈতিক পত্র (নোট ভার্বাল) পাঠায় ঢাকা।

এরই মধ্যে ভারতের কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে, দিল্লি সম্ভবত ওই পত্রের কোনো জবাব দেবে না। কারণ, তাদের ভাষায়, প্রত্যর্পণের জন্য যে ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে তার অভাব রয়েছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত