ফরিদ জাকারিয়া বলছেন, এই চিত্তাকর্ষক তথ্য সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের উল্টো পতন হয়েছে। ট্রাম্পের বিশ্ববীক্ষা এখনো ১৯৬০-এর দশকে আটকে আছে বলে মনে করেন ফরিদ জাকারিয়া। তখন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বড় উৎপাদনশীল শক্তি ছিল। একই সঙ্গে তিনি রাশিয়াকে বড় শক্তি মনে করেন। যে দেশের সঙ্গে তিনি অনেক চুক্তি করতে পারবেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই পাল্টা শুল্কে রাশিয়ার পণ্যে শুল্ক আরোপ করেননি ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের সেবা ও প্রযুক্তি ট্রাম্পের কাছে কিছুই মনে হয় না। এ কারণে তিনি বারবার উদাহরণ দেন, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিতে উৎপাদন খাতের হিস্যা কমেছে। পাল্টা শুল্কের হিসাবও করা হয়েছে পণ্য বাণিজ্যের ঘাটতির হিসেবে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রায় ৭৫ শতাংশই এই সেবা—সফটওয়্যার, সংগীত, চলচ্চিত্র, ব্যাংকিং, আইন ইত্যাদি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি এমনিতেই সুরক্ষাবাদী ছিল। তাদের শুল্ক ও অশুল্ক বাধার পরিমাণ বিশ্বের ৬৮টি দেশের চেয়ে বেশি ছিল। নতুন এই শুল্কের মধ্য দিয়ে তাদের শুল্কহার ১৯৩০-এর দশকের স্মুট হাওলির শুল্ক হারের চেয়ে বেশি হয়ে গেল। এমনকি ট্রাম্প ১৯ শতকের শুল্ক যুগের স্মৃতিচারণা করেন। তখন আয়কর ছিল না, ছিল শুধু শুল্ক। সেই বাস্তবতায় ফিরে গেলে যুক্তরাষ্ট্র তখনকার মতো দরিদ্র ও দুর্নীতিপ্রবণ দেশে পরিণতি হতে পারে বলে মনে করেন ফারিদ জাকারিয়া।
এই যখন বাস্তবতা, তখন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ও টেকসই উন্নয়নের পুরোধা ব্যক্তিত্ব জেফরি ডি স্যাক্স মনে করেন, এসব কিছুর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পতন ত্বরান্বিত হবে। মার্কিন সাংবাদিক গ্লেন ডিজেনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পৃথিবী যেমন বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে, ঠিক তেমনি একাধিক মুদ্রাকেন্দ্রিক ব্যবস্থার দিকেও এগোচ্ছে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে ডলারের শক্তি আরও কমবে। এবার ট্রাম্পের এই শুল্ক যুদ্ধের কারণে পরিস্থিতির আরও দ্রুত অবনতি হবে বলেই তিনি মনে করেন। কেননা মার্কিন অর্থনীতি ও রাজনীতির ওপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে।
সামগ্রিকভাবে ট্রাম্প একধরনের ভ্রমের মধ্যে আছেন বলে মনে করেন জেফরি ডি স্যাক্স। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনের মৌলিক বোঝাপড়ায়ও ঘাটতি আছে বলে তাঁর মত। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে ১৯ শতকে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পরিসংখ্যানে জানা যায়, সেবা খাত অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। সেই ১৯৩৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অকৃষি খাতের ৫৭ শতাংশ কর্মসংস্থান হতো সেবা খাতে, বর্তমানে যা ৮৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।