বন বিভাগের জায়গায় দলীয় প্রভাব বিস্তার করে দোকান ঘর নির্মাণ এবং লোকজনদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে প্লট আকারে জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদল নেতা ইউনুছ মাঝির বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ইউনুছ মাঝি বুড়িরচর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড বড়দেইল গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে। তিনি একই ওয়ার্ডের যুবদলের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজি, বনের গাছ কাটা, ভূমি দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সরকারি বন বিভাগের জায়গায় কয়েকটি বড় বড় টিনশেড ঘর। পাশেই তাঁবু টানিয়ে আরও নির্মাণাধীন ৮/১০টি ঘরের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ইউনুছ মাঝির নেতৃত্বে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এলাকার কিছু সুবিধাবাদী লোক সরকারি জায়গা দখল করা শুরু করে। তাদের মধ্যে আফছার, আশ্রাফ, সেলিম, ভুট্ট, নুর আহম্মদ মাঝি, নবীর, হোসেন, রাসেল, ফয়েজ মাঝি, কাসেম, আব্দুর রহিমসহ আরও কয়েকজন ঘর নির্মাণ করেন। তারা দিনে দুপুরে এ অবৈধ দখলদারী ও তা কেনাবেচার কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগের লোকজন বাধা প্রদান করলেও তারা তা মানছেন না।
এলাকাবাসী জানায়, যুবদল নেতা ইউনুছ মাঝি ৫ আগস্টের পর বন বিভাগের জায়গায় অন্যজনের গো-মহিষের খোয়াড় জোরপূর্বক দখল করে নেয়। এরসঙ্গে একটি দোকানঘর নির্মাণ করে তা আবার বিক্রি করে দেয়। পরে তারপাশে সরকারি জায়গা দখল করে আরও অনেকগুলো দোকানঘর স্থাপন করে। পাশাপাশি বনের জায়গায় আরও দোকানঘর নির্মাণ করার উদ্দেশে মানুষজনের কাছ থেকে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে ভিটির দখল বিক্রি করে।
উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তাছলিম আলম বলেন, এখানে মহিষ-গরুর একটা খোয়াড় রয়েছে। যেটার দায়িত্বে আমাদের ৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ইউনুছ মাঝি আছেন। তিনি ওই খোয়াড়ের দায়িত্ব পাওয়ার পরে প্রভাব বিস্তার করে এখানে একটা দোকান ঘর দেন। এ দোকানের পাশে পরে তাঁবু দিয়ে আরও কয়েকটি দোকান ঘর নির্মাণ করেন।
উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক বেলাল উদ্দিন বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে এখানে তৎকালীন সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী এবং চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের নির্দেশে দুটি ঘর দেওয়া হয়েছিল। যা আমরা উঠিয়ে দেওয়ার জন্য বন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। এখন জানতে পেরেছি, এখানে দলের নাম ভাঙিয়ে ইউনুছ মাঝির নেতৃত্বে অনেকগুলো ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে এবং মেপে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আমরা উপজেলা এবং ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের কয়েকজন নেতারা এসে দেখেছি ঘটনা সত্য।
তার এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা। বুড়িরচর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বেলাল উদ্দিন ও ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইলিয়াছ মাঝি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ, দলের নাম বিক্রি করে কেউ কোনো অপকর্ম করতে পারবে না। ইউনুছ মাঝিসহ যারা ঘর নির্মাণ করছে তাদের দলীয়ভাবে কারা শেল্টার দিচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। এ বিষয়ে আমরা দলীয় নেতাকর্মী এবং প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনুছ মাঝি বলেন, আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাাজি, ভিটা দখল, জায়গা মেপে বুঝিয়ে দেওয়াসহ সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি কারও থেকে কোনো টাকা-পয়সা নিইনি। এখানে একটা গরু-মহিষের খোয়াড় আছে। বর্ষায় যাতে মানুষের কষ্ট না হয় সে জন্য বন বিভাগ এবং দলীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে একটা ঘর আমি দিয়েছি। বাকি ঘরের বিষয়ে আমি জানি না।
এ বিষয়ে বন বিভাগের সাগরিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রণব কুমার বলেন, স্থানীয় টানবাজারের বাইরে বন বিভাগের জায়গায় বিএনপি নেতা ইউনুছের নেতৃত্বে ঘর দেওয়ার খবরটি আমরা পেয়েছি। তাদের বারবার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ করছে। আমরা এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং এছেন বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। রেঞ্জ কর্মকর্তা যদি কোনো অভিযোগ দেয় আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।