রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এদিন আন্দোলনকারীদের চেয়ে উৎসুক জনতার বেশি ভিড় দেখা গেছে। বিক্ষোভ ঘিরে বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, সেনা, র্যাব, এপিবিএন ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। দেওয়া হয় অতিরিক্ত কাঁটাতারের নিরাপত্তা ব্যারিকেড।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে বঙ্গবভনের সামনে রাষ্ট্রপতি অপসারণের দাবিতে ছাত্র-জনতার উপস্থিতি ছিল। সবশেষ রাত ১০টা পর্যন্ত ১০-১৫ জন আন্দোলনকারীকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। তারা বলছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অপসারণ না হওয়ার পর্যন্ত তারা বঙ্গভবন এলাকা ছাড়বেন না।
এরআগে রাত সোয়া ৯টার দিকে ‘বিপ্লবী ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে কিছু আন্দোলনকারী পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। তারা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বিকাল চারটা থেকে আবারও বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ করার ঘোষণা দেন।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে গত মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুর থেকে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে ছাত্র-জনতা। এদিন রাত দুইটা পর্যন্ত চলে আন্দোলন। তবে মঙ্গলবার থেকে বঙ্গভবনের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চারজন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের (এনআইডি) সিএসসি বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম সাব্বির বলেন, আপনারা জানেন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তার কাছে পদত্যাগপত্র রয়েছে। অথচ এখন রাষ্ট্রপতি বলছেন, তার কাছে পদত্যাগপত্র নেই। তার মানে এই রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন। তাছাড়া তিনি খুনি হাসিনার দালাল। হাসিনা যখন গণহত্যা চালিয়েছে তখন তিনি কোনও শিক্ষার্থীকে দেখতে যাননি। শিক্ষার্থীদের পক্ষও নেননি। এই রাষ্ট্রপতি থাকলে দেশের মানুষের রক্তচুষে খাবে। তাই তার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমরা বঙ্গভবন ছেড়ে যাবো না।
এরআগে মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন ব্যানারে নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। এদিন আন্দোলনকারীরা পুলিশের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙ্গে বঙ্গবভনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হলে পরে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিন রাতে পুলিশের একটি দলের ওপর হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে ২৫ পুলিশসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়। তবে বুধবার দুই-একটি ছাড়া তেমন কোনও সংগঠনের ব্যানার দেখা যায়নি। ছিল না আন্দোলনকারীদের তেমন উপস্থিতি।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকাল চারটার দিকে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি দল বঙ্গবভনের সামনে আসার কথা থাকলেও তারা আসেননি। তবে, বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ‘জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ ফোরামের’ ব্যানারে একটি মিছিল বঙ্গবভনের সামনে আসে। এসময় তারা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। প্রায় ২০ মিনিট বিক্ষোভ করে তাদের মিছিলটি পাঁচটা ৫০ মিনিটে দৈনিক বাংলা মোড় দিয়ে চলে যায়। ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন শেখ হাসিনার দোসর ও মনোনীত ব্যক্তি। ছাত্র-জনতার সরকারের সময় তার থাকার কোনও অধিকার নাই। অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে হবে। শাহাবুদ্দিন খুনি হাসিনার দোসর হলেও তিনি আমাদের রাষ্ট্রপতি। তাকে আমরা সম্মান করি। তাই তাকে বলতে চাই, আপনি সসম্মানে চলে যান। ছাত্র-জনতার সরকারে সময়ে আপনার দরকার নাই। সম্মান রক্ষার্থে আপনি নিজে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় জনগণ আপনাকে ছাড়বে না। আপনাকে গদি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামানো হবে।
এরআগে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকজন আন্দোলনকারীকে বঙ্গভবনের সামনের সড়কে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে ইব্রাহিম সাব্বির নামে এক শিক্ষার্থী জানান, তারা তিনজনই গতকাল দুপুর থেকে এখানে আছেন। তারা মোট সাতজন এখানে সারা রাত অবস্থান করেন। কয়েকজন অসুস্থবোধ করায় চলে যান। কিন্তু তিনজন আন্দোলনকারী রয়ে গেছেন। তারা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বঙ্গভবন না ছাড়ার প্রতিজ্ঞার কথা জানান। সায়েদাবাদ থেকে জাহানারা নামে এক গৃহিণী রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি বলেন, আমি সায়েদাবাদ থেকে এখানে এসেছি শিক্ষার্থীদের সাপোর্ট দিতে। খুনি হাসিনার নির্বাচিত কোনও ব্যক্তিকে এই জনগণের সরকারে রাখা যাবে না। তাছাড়া রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন দেশের মানুষকে মেরেছে, শত শত শিক্ষার্থীর হত্যার জন্য দায়ী। তবে তিনি একটি সম্মানজনক চেয়ারের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাই তার সঙ্গে এখনও কেউ দুর্ব্যবহার করছেন না। তবে তার উচিৎ সম্মান নিয়ে সত্তর পদত্যাগ করা।
এদিকে, বঙ্গবভনের সামনে মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যষ্টনী দেখা গেছে। কাঁটাতারের ব্যারিকেডের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে। বঙ্গভবনের সামনে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের সামনে ও চারপাশে কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। যাতে করে কোনও আন্দোলনকারী ভেতরে ঢুকতে না পারে। বঙ্গভবনের ফটকের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি সেনা, র্যাব ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। এছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশসহ গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। যাতে করে সেখানে কোনও ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটতে পারে।
এদিকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের সময়সীমা নিয়ে বুধবার (২৩ অক্টোবর) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এটা আইনি সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। রাজনৈতিক সমঝোতা এবং জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত আসবে। কারণ, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু এখন দেশের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা জরুরি। কেউ যেন এটাতে ব্যাঘাত না ঘটায় তা দেখছে সরকার।’
হঠাৎ কেন রাষ্ট্রপতি অপসারণের দাবি
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতিকে বহাল না রাখার বিষয়ে জানিয়ে আসছিল। তবে সাংবিধানিক নানা বাধ্যবাধকতা থাকায় রাষ্ট্রপতিকে বহাল রেখেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারে পতন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’
প্রশ্ন হতে পারে, সরকার পতনের আড়াই মাস পর কেন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি উঠছে? সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনও দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।’ রাষ্ট্রপতির এমন মন্তব্যের পর থেকেই রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনে নেতারা।
রাজনৈতিক দলগুলো কী ভাবছে!
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সরকার। তবে বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিএনপি ছাড়া আর কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেননি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডা. মোহাম্মদ ইউনূস। এদিন সকালে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার বাসভবন যমুনায় বৈঠক করেন। পরে দুপুরে সাংবাদিকদের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ স্পেসিফিক কোনও ব্যাপার না। আমরা বলেছি, দেশে নতুন কোনও সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায় সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করবো। এখানে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশার সংগঠন, ছাত্র-যুব সংগঠন সবার দৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। যাতে কেউ কোনোভাবে দেশে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট কিংবা রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে না পারে, এ ব্যাপারে সবাইকে হুঁশিয়ার থাকতে হবে।
কোন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি অপসারণ হবে!
অনেকে বলছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অপসারণ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে তিনি নিজে থেকে পদত্যাগ করবেন, নাকি সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে! এ নিয়ে চলছে আলোচনা। রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে, কে হবেন নতুন রাষ্ট্রপতি। এছাড়া মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের পদ্ধতি কী হবে। তা এ সপ্তাহে স্পষ্ট হতে পারে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। গত রবিবার (২০ অক্টোবর) থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি উঠতে শুরু করে।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্য এবং শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভে রাষ্ট্রপতির বিদায়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে ভালো। না হলে সরকারের পক্ষ থেকে এ সপ্তাহের মধ্যেই একটা অবস্থান পরিষ্কার করা হতে পারে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় অপসারণ করা হবে, তা এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।
উপদেষ্টারা কী বলছেন
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত সোমবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল।’ আইন উপদেষ্টার বক্তব্যে সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন যুব, ক্রীড়া ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমে বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে অনেকেই মনে করছেন বিশ্বাসঘাতকতা। কারও মতে, এটা শপথ ভঙ্গের শামিল। এ জন্য মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তবে সরকার এখনও এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করেনি।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ ভঙ্গ করেছেন অভিযোগ করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে একমত অন্তর্বর্তী সরকার। তবে রাষ্ট্রপতিকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি উপদেষ্টা পরিষদ।
রাষ্ট্রপতি অপসারণ দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবিতে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ হয়েছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ করে কয়েকটি সংগঠন। পরে বিকাল চারটা থেকে গণঅধিকার পরিষদ, ইনকিলাব মঞ্চসহ কয়েকটি ব্যানারে তারা বিক্ষোভ করে। একই দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে ইনকিলাব মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি সংগঠন। এছাড়াও মঙ্গলবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সমাবেশ ও বিক্ষোভ হয়েছে।
এছাড়াও ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, পাবনা, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, ফেনী, মেহেরপুর, নড়াইল ও ঝিনাইদহ থেকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও একই দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
পদত্যাগের সময় নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুর থেকে বঙ্গভবনের সামনে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ করে ছাত্র-জনতা। সন্ধ্যার পর থেকে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ মানুষও। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গভবনের সামনে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম জানান, এ সপ্তাহের দুই দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করলে তারা আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে নামাবেন। তবে তাদের এমন বক্তব্যে বিরোধিতা করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতা তারেক রহমান ও তার অনুসারীরা। তারা বলেন, আজই রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ করতে হবে। মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে তারেক জানান, বুধবার (আজ) যেভাবেই হোক রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে হবে। না হলে বুধবার তাকে টেনেহিঁচড়ে নামানো হবে।
সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
রাষ্ট্রপতি অপসারণের দাবিতে গত রবিবার (২০ অক্টোবর) থেকে আলোচনা শুরু হলেও মূলত মঙ্গলবার থেকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে শিক্ষার্থী ও জনতাকে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলন শুরু করে ছাত্র-জনতা। এদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গবভনের সামনের ব্যারিকেড ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এসময় পুলিশের লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেডে দুই শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মীসহ অন্তত সাতজন আহত হয়। পরে রাত ১০টার দিকে বঙ্গভবনের পাশে রাজউক ভবনের সামনে একদল পুলিশের ওপর হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে অন্তত ২৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়।
আরও পড়ুন:
বঙ্গভবনের সামনে আজও বিক্ষোভ, নিরাপত্তা জোরদার
বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সেনাবাহিনীর