চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় গত ৩ মার্চ গণপিটুনিতে নিহত হন মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৫) এবং মোহাম্মদ ছালেক (৩৫)। দুই জনের মৃত্যুর পর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। উদ্ধার করা অস্ত্রটি নগরের কোতোয়ালি থানা থেকে ৫ আগস্ট লুট হয়েছিল। হত্যার আগে ওই পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়েছিলেন নিহত নেজাম উদ্দিন। এতে চার জন গুলিবিদ্ধ হন। আহতরা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম সানতু।
রাউজানে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলায় দুই আসামিকে গ্রেফতারের ঘটনায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ৫ আগস্ট অনেক থানা-ফাঁড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক অস্ত্র-গুলি খোয়া গেছে। সাতকানিয়ায় নিহত ব্যক্তির পাশ থেকে যে অস্ত্রটি উদ্ধার হয়েছিল সেটি কোতোয়ালি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের একটি। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি অস্ত্র আইনে মামলা করেছে। তবে এখনও নিহত ও গুলিবিদ্ধদের পক্ষ থেকে থানায় কোনও মামলা করেনি।
পুলিশ সুপার বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে খুন হন নেজাম ও সালেক। ঘটনার দিন তারা সাতটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের অস্ত্র প্রদর্শন করেছিলেন। তারা চাঁদার জন্য নিয়মিত সেখানে যেতেন বলে পুলিশ তথ্য–প্রমাণ পেয়েছে। গত তিন মাসে ৮ বার তারা একই স্থানে গিয়েছিল। এমনকি ঘটনার চার থেকে পাঁচ দিন আগেও তারা সেখানে গিয়ে এক ইউপি সদস্যের স্ত্রীকে থাপ্পড় মেরেছিলেন; যার কারণে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঘটনার দিন তারা ৭টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে গিয়েছিলেন। ওখানকার দোকানদারদের অস্ত্র প্রদর্শন করেছেন।
পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, গণপিটুনির ঘটনায় অনেকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কথা বলছেন। ঘটনার সময় বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের কোনও ব্যক্তি বা চেয়ারম্যানের উপস্থিতি ছিল কিনা, প্রশ্ন তুলেছেন। আসলে আমরা কিন্তু এ ধরনের কারও উপস্থিতি খুঁজে পাইনি। এমনকি সেখানে তাদের কোনও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের শক্ত অবস্থানও পাইনি।
তিনি আরও বলেন, কোনও অবস্থায় ভাবার সুযোগ নেই প্রশাসন নির্বিকার হয়ে গেছে। আমরা আমাদের মতো প্রকৃত সত্য ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য যা কিছু দরকার, সব কিছু করবো। সে জন্য একটু সময় নিচ্ছি। প্রকৃত ঘটনা কী, সেটা আমরা উদ্ঘাটন করবো।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ছালেকের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে, তার মধ্যে দুটি হত্যা মামলা। এছাড়া চুরি ও বিস্ফোরক আইনেও মামলা আছে। নেজামের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে।
গত সোমবার রাতে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় মসজিদের মাইকে ডাকাত আসার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে গণপিটুনিতে সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা এলাকার মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন ও একই ইউনিয়নের গুরগুরি এলাকার মোহাম্মদ সালেক নিহত হন।
এদিকে ঘটনার পর সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সেক্রেটারী আইযুব আলী সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, এটি পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড।
এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রাম, এটি বহু আগে থেকেই সন্ত্রাস কবল এলাকা। এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সন্ত্রাসী নজরুল ইসলাম প্রকাশ মানিক চেয়ারম্যান ছনখোলা গ্রামের পাহাড়, পাহাড়ি গাছ ও ইটভাটাগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। গ্রামের অনেক মানুষের নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে তাদের পাহাড়, ভূমি জবর দখল করেছিল। এলাকার মানুষ তার অত্যাচার নিপীড়নে অতিষ্ট হয়ে তাকে বয়কট করে। তৎকালীন আওয়ামী সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করলেও তার বাহিনী ধরাছোঁয়ার বাইরে। মানিকের ভাই হারুন ও মমতাজের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই সন্ত্রাসীরা এখনও নানা অপকর্মে জড়িত। পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী দুঃশাসনে নির্যাতিত ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেককে বিচারের কথা বলে ডেকে এনে মাইকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে গণপিটুনির নামে মূলতঃ চেয়ারম্যান মানিকের নির্দেশে তার ভাই মমতাজ ও হারুনের পরিকল্পনায় কুপিয়ে হত্যা করা করেছে, যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন