পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণের ক্ষেত্রে সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে সতর্ক থাকা হবে বলে জানিয়েছে মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় আন্তর্জাতিক মান, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং ঢাকার অবকাঠামোর উপযোগিতা বিবেচনা করে এমআরটি লাইন-১ এর উড়াল ও পাতাল পথ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-১) প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাসেম ভূঁঞা সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকার অতি ঘনবসতিপূর্ণ এবং যানজট কবলিত পরিবেশে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পাতাল রেল নির্মাণ একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এমআরটি লাইন-১ এর রুট এলাইনমেন্ট ২০১৫ সালে রিভাইজড স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (আরএসটিপি)-তে প্রস্তাব করা হয় এবং ২০১৭-১৮ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়। জাইকার প্রণীত সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় আন্তর্জাতিক মান, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং ঢাকার অবকাঠামোর উপযোগিতা বিবেচনা করে এমআরটি লাইন-১ এর উড়াল ও পাতাল পথ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রস্তুতি
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বড় প্রকল্পে ঝুঁকি থাকলেও এমআরটি লাইন-১ নির্মাণে ঝুঁকির প্রভাব কমাতে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হবে। টানেল নির্মাণে টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) ব্যবহৃত হবে, যা ঢাকার মাটির গুণাগুণ অনুযায়ী আর্থ প্রেশার ব্যালেন্সড (ইপিবি) পদ্ধতিতে কাজ করবে। এর ফলে খননকালে মাটির চাপ সামঞ্জস্য থাকে এবং মাটি ডেবে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। এছাড়া ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর (গ্রাউন্ড ওয়াটার টেবিল) অনেক গভীরে থাকায় ঢাকার মাটি টানেল নির্মাণের উপযোগী। সুড়ঙ্গ নির্মাণের সময় চলমান টিবিএম দিয়ে খনন করা মাটির নমুনা সংগ্রহ করে অনবরত পরীক্ষা করা হবে এবং সেই মোতাবেক টিবিএম দিয়ে খনন কাজ সমন্বয় করা হবে।
যদি টানেল খননের কারণে সড়কের পেভমেন্টে ক্ষতি হয়, কন্ট্রাক্টর তা মেরামত করবেন। এছাড়া টানেল নির্মাণের সময় টিবিএম যে পথ ধরে যাবে তার উপরে থাকা বিভিন্ন স্থাপনার নিচে সেন্সর বসানো হবে। যাতে মাটি ডেবে যাওয়ার আগাম সতর্ক বার্তা পাওয়া যায়। ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা মেরামত ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
টেকসই নকশা ও নিরাপত্তা
পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণে টেকসই নকশা ও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্ষায় জলাবদ্ধতা থেকে মেট্রোরেল পথ সুরক্ষায় স্টেশনগুলোর প্রবেশ ও নির্গমন পথ উচ্চতর স্থানে ডিজাইন করা হয়েছে। ফ্লাড-গেট ও পানির পাম্পও রাখা হবে। ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেও পাতাল রেল নিরাপদ, কারণ মাটির গভীরে থাকা টানেল ভূমিকম্পে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সুবিধা বনাম ব্যয়
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাতাল রেলের নির্মাণ খরচ উড়াল রেলের তুলনায় বেশি হলেও এটি শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর জন্য বেশি কার্যকর। উন্নত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকল্পে নিয়োগ দেওয়া হবে।
পাতাল রেলের নির্মাণ কাজ সাময়িক কিছু অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১) থেকে জানানো হয়, বিশ্বের অনেক মেগাসিটিতে বহু বছর ধরে পাতাল রেল সেবা দিয়ে আসছে। ঢাকায় পাতাল রেলের নির্মাণ কাজ সাময়িক কিছু অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা শহরবাসীর জীবনমান উন্নত করবে। সুতরাং ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেও সতর্কতার মাধ্যমে কাজ এগিয়ে নেওয়াই আধুনিক নগরায়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।