Homeদেশের গণমাধ্যমেপাতাল মেট্রোরেলের কাজ এগোলো কতদূর?

পাতাল মেট্রোরেলের কাজ এগোলো কতদূর?


ইতোমধ্যে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটে (ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি লাইন-৬) মেট্রোরেল চলছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। এর সুফলও পাচ্ছেন রাজধানীবাসী। এই সুফলের পরিধি বাড়াতে আরও পাঁচটি মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-১ হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল।

পাতাল মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর। অর্থাৎ আর দুই বছর বাকি মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হতে।

কিন্তু এখনও প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জমিতে ডিপোর (যেখানে ট্রেন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা হয়) অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। চলছে ভূমিতে পাইলিংয়ের কাজ।

ডিপো নির্মাণের পর রেললাইন ও স্টেশন নির্মাণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে। কর্তৃপক্ষ আশাবাদী, এখনও অনেক কিছু দৃশ্যমান না হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ করে মাটির নিচের মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব হবে।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-১) তথ্য অনুযায়ী, মোট ১২টি ধাপে পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণকাজ শেষ হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে (প্যাকেজ সিপি-১) পিতলগঞ্জে ডিপো নির্মাণের জন্য জমি উন্নয়ন অর্থাৎ পাইলিংয়ের কাজ চলছে। পরের ধাপে (প্যাকেজ সিপি-২) ডিপোর ভবন নির্মাণ হবে। এছাড়াও আরও চারটি ধাপে মাটির নিচে টানেল ও স্টেশন নির্মাণ করা হবে।

গত বছর ২ ফেব্রুয়ারি এই লাইনের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। এখন পর্যন্ত প্রথম ধাপের কাজ এগিয়েছে ৭৫ শতাংশ। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী বছর আগস্টের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার আশা করছে কর্তৃপক্ষ। ৯৪ একর আয়তনের এই জমির পাইলিং কাজ শেষ হলে দ্বিতীয় ধাপে এখানে ডিপোর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ হবে।

প্রথম ধাপের (সিপি-১) কাজ চলমান থাকা অবস্থায়ই বাকি ১১টি ধাপের কাজ শুরুর জন্য বিভিন্ন ঠিকাদার কোম্পানির দরপত্র প্রক্রিয়াধীন আছে।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১) সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বাকি ১১টি প্যাকেজের বিষয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচিত ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবো। যাতে আগামী বছর মার্চের মধ্যে ঠিকাদাররা কাজ শুরু করতে পারে।

এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই মাটির নিচের কাজ শুরুর কথা ছিল। সেটি এখন প্রায় ছয় মাস পিছিয়েছে। তবে এতে সময়মতো লাইন-১-এর কাজ শেষ করতে সমস্যা হবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

লাইন-১ এর পিতলগঞ্জ ডিপো

তিনি বলেন, পঞ্চম ধাপে গিয়ে আমাদের মাটির নিচে লাইন তৈরির কাজ শুরু করা হবে। এই ধাপের মাধ্যমেই বলা চলে লাইন-১-এর মূল কাজ শুরু হবে এবং দ্রুতই কাজ এগোবে। তাই ছয় মাস দেরি হলেও নির্ধারিত সময় ও বাজেটের মধ্যেই এই প্রজেক্ট শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। সব কিছু ঠিকমতো চললে ২০২৬-এর ডিসেম্বরে এই কাজ সম্পন্ন করা যাবে।

দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা কোম্পানি (জাইকা)। সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের চার ভাগের তিন ভাগ অর্থ দিচ্ছে সংস্থাটি। মাটির নিচে রেলপথ ও স্টেশন নির্মাণেও ব্যবহার করা হবে জাপানি প্রযুক্তি।

যে পথ দিয়ে যাবে এমআরটি লাইন-১

দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১-এর দুটি অংশ রয়েছে। এর একটি বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রুট, যার পুরোটাই হবে মাটির নিচ দিয়ে। আরেকটি নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল রুট, এর অংশের দুটি স্টেশন বাদে বাকি অংশ হবে উড়াল।

বিমানবন্দর অংশে মোট স্টেশন থাকবে ১২টি। এগুলো হলো–বিমানবন্দর, টার্মিনাল ৩, খিলক্ষেত, নন্দা, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, আফতাবনগর, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর।

আর পূর্বাচল রুটে থাকবে আরও ৮টি স্টেশন। এগুলো হলো– নতুন বাজার,  নদ্দা, জোয়ার সাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব ও পূর্বাচল টার্মিনাল। এই এমআরটি লাইন-১-এর ডিপো হবে রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে।

অন্যান্য মেট্রোরেলের লাইনের কাজে অগ্রগতি

এমআরটি লাইন-১-এর পাশাপাশি চলছে এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর)-এর কাজও। হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত হবে এই লাইন। মোট ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৪টি স্টেশন (পাতাল ৯টি ও উড়াল ৫টি) থাকবে এই রুটে।

মোট ১০টি ধাপে এমআরটি লাইন-৫-এর কাজ সম্পন্ন করা হবে। গত বছর ৪ নভেম্বর এই লাইনের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়। বর্তমানে প্রথম ধাপে (সিপি) হেমায়েতপুর ডিপো তৈরির জন্য ভূমি উন্নয়ন কাজ চলছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই কাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ২৭ ভাগ। বাকি ৯টি ধাপের কাজের জন্য বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দরপত্র নানা পর্যায়ে প্রক্রিয়াধীন আছে।

কাজ শুরু হওয়া অন্যান্য মেট্রোরেল প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করতে পরিকল্পনা মতো এগোনো হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ। তিনি গত ১৪ অক্টোবর লাইন-৬-এর ডিপো কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হবে। প্রত্যেক লাইনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি টার্গেট নির্ধারণ করা আছে। এর মধ্যে ২৬ সালের মধ্যে লাইন-১, যা প্রথম পাতাল রেল হতে যাচ্ছে, সেটি চালুর চেষ্টা চলছে। ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে ২০৩০-এর মধ্যে বাকি মেট্রোরেলগুলো চালু করাই আমাদের লক্ষ্য।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত