অবিলম্বে পাটকলসহ সব বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে ‘জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ৬টি বন্ধ চিনিকল খুলে দেওয়ার বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করা ও পরবর্তী করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চিনি কলগুলো চালু করার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের যুগ্ম আহ্বায়ক ও শ্রমিক নেতা আব্দুল্লাহ কাফি রতন। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের নতুন পথ দেখিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী লড়াই সমাজের সর্বত্র বিস্তৃত হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় শিল্প ও শ্রমখাতে বৈষম্যবিরোধী লড়াই নতুন উদ্দীপনা পেয়েছে। জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ একইসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয় ও পাট মন্ত্রণালয়ে যথাক্রমে বন্ধ চিনি ও পাটকল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। সরকার চিনিকল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে লড়াইয়ে বিজয় শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্ধ ৬টি চিনিকলের পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার পর টাস্কফোর্স ৬টি চিনিকল পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়ার প্রস্তাব করে। প্রথম পর্যায়ে শ্যামপুর, সেতাবগঞ্জ চিনিকল, দ্বিতীয় পর্যায়ে পঞ্চগড়, পাবনা চিনিকল ও তৃতীয় পর্যায়ে কুষ্টিয়া, গাইবান্ধার রংপুর চিনিকল খুলে দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রতিবেদন শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরে প্রধান উপদেষ্টা প্রতিবেদনের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন এবং প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি সাপেক্ষে ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বরের স্থগিতাদেশ ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রত্যাহার করা হয় এবং তিনটি পর্যায়ে বন্ধ চিনিকলগুলো খুলে দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সরকারি আদেশে বন্ধ হওয়া ৬টি চিনিকল খোলার সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। এটি চিনি শ্রমিক, আখচাষী ও জাতীয় পর্যায়ে বন্ধ কারাখানা খুলে দেওয়ার জন্য গড়ে ওঠা আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক বিজয়।
আবদুল্লাহ ক্বাফী বলেন, শাসক শ্রেণির সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর নয়া উদারবাদী নীতির লক্ষ্যই হচ্ছে রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তি মালিকানায় দিয়ে দেওয়া। ক্ষমতাসীনদের এ নীতি সরাসরি শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের ওপর আক্রমণ। এ আক্রমণ কেবলমাত্র শ্রমিক আন্দোলন ও কৃষক আন্দোলন দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না। এ লড়াই জাতীয় সম্পদ রক্ষার লড়াই। জনগণের সম্পদ জনগণের মালিকানায় রাখার লড়াই। কতিপয় লুটেরা ধনিক ও তাদের অনুগ্রহভোগী রাজনৈতিকদের বিরুদ্ধে জনগণের লড়াই। সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষাকারী সরকারের গণবিরোধী নীতিকে রুখতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে জাতীয় আন্দোলন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
তিনি আরও বলেন, পাটকলসহ অন্যান্য বন্ধ কারখানা উপযুক্ত আধুনিকীকরণের মাধ্যমে খুলে দেওয়ার লড়াই জারি থাকবে। আমরা আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে বন্ধ পাটকলগুলো খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তা হলো- ২৯ ডিসেম্বর, সকালে রংপুর প্রেসক্লাবে মিট দ্য প্রেস, দুপুরে শ্যামপুরে আখচাষী সমাবেশ। ৩০ ডিসেম্বর, সকালে দিনাজপুর প্রেস ক্লাবে মিট দ্য প্রেস, দুপুরে সেতাবগঞ্জে আখচাষী সমাবেশ। ৩১ ডিসেম্বর, পঞ্চগড় চিনিকল এলাকায় আখচাষী সমাবেশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, শ্রমিকনেতা মানস নন্দী, কৃষকনেতা ও আখচাষী আলতাফ হোসেন, শ্রমিকনেতা কামরুজ্জামান ফিরোজ, হারুনর রশীদ ভূইয়া, শামীম ইমাম প্রমুখ।