Homeদেশের গণমাধ্যমেপর্যটক বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার | কালবেলা

পর্যটক বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার | কালবেলা


ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটন জেলা কক্সবাজারে রেকর্ড পরিমাণ পর্যটকের ঢল নামতে পারে—এমনটাই প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। লাখো পর্যটক বরণে এরই মধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন চলছে কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোর হোটেল-রেস্তোরাঁ সংস্কারের ফিনিশিং টাচ। সাধারণত প্রতি বছর রমজানে নির্জীব কক্সবাজারে নানা সংস্কারে মনোযোগী হন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এর জেরে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোন, বিউটি স্পট ইনানী, পাটোয়ারটেক, হিমছড়ি, টেকনাফ, রামু, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক সংলগ্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় নবউদ্যোমে সংস্কার কাজ চলছে।

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে হাজারো বাংলাদেশি প্রতিবেশী দেশ ভারতে ঘুরতে যেত। কিন্তু এবার ভারতে যেতে না পারায় তারা কক্সবাজারমুখী হবেন।

স্বভাবতই কক্সবাজারের সাগর মানুষ টানছে, যার কারণে টানা ঈদের ছুটিতে রেকর্ড পর্যটক সৈকতে ভিড়বে মনে করা হচ্ছে। ৮-৯ দিন ব্যস্ত সময় পার করবে কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে আবাসিক হোটেলের শতভাগ রুম আগাম বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। হোটেল-মোটেল জোন, সমুদ্রসৈকত ও কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোয় ভ্রমণপিপাসু মানুষের উপচে পড়া এরই মধ্যে আঁচ করা যাচ্ছে।

হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় পর্যটকরা ভ্রমণের জন্য সমুদ্র শহরকে বেছে নেয়। এতে টানা ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কক্সবাজারের পর্যটনে ছন্দপতন ঘটেনি।

সম্প্রতি সরেজমিন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, বিশাল বালিয়াড়িতে সুনসান নিরবতা। হাতে গোনা কয়েকজন পর্যটক মনের আনন্দে সৈকতে পায়চারি করছেন। কেউবা সাগরের পানিতে গা ভেজাচ্ছেন। সারিবদ্ধ পর্যটন ছাতাগুলো খালি পড়ে আছে। সেগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। পর্যটকবাহী ঘোড়াগুলো ঝাউবাগানে অলস সময় পার করছে। বিচবাইক ও স্পিডবোটের অসহ্য শব্দদূষণের মাত্রা নেই। বিচের দলবদ্ধ পাপ্পারাজিরা ঈদের ছুটিতে আগমনকারী পর্যটকদের জন্য ক্যামরায় শান দিচ্ছেন। একই অবস্থা বিউটি স্পট হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেকসহ শহরের বাইরের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে।

ইনানীর বিচ ক্যাফের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনিন্দ্য সুন্দর মেরিন ড্রাইভ সড়ক কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসা দক্ষিণে টানছে। ইনানীর সি-পার্ল, বে-ওয়াচ, দ্য ওয়েব রিসোর্ট, প্যাভেলস্টোন, ড্রিম হলিডে রিসোর্ট, এনকর রিসোর্টের মতো তারকামানের হোটেলগুলো বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের গর্ব। ঈদে ইনানীর হোটেল-রেস্তোরাঁয় রেকর্ড পর্যটক সমাগম ঘটবে।

অভিজাত রেস্তোরাঁ সি-মাউন্ডের মালিক সুইডেন প্রবাসী যুবক সাদেক রুবেল বলেন, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এতে পর্যটকরা পাটোয়ারটেকের পাথুরে বিচ দেখে মনের আনন্দে সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য উপভোগ করে।

কক্সবাজারে সপরিবারে বেড়াতে আসা ঢাকার পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলে এলাহি চৌধুরী জানান, রমজান মাস মানেই কক্সবাজার ফ্যামিলি টাইমের পারফেক্ট সময়। পুরো পরিবার নিয়ে মনের আনন্দে কক্সবাজার ঘুরছি। কোনো ঝামেলা নেই, কক্সবাজার সত্যিই অপূর্ব।

কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক হৃদয় শীল কালবেলাকে জানান, পুরো পরিবার নিয়ে ট্রেনে চড়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছি। বেড়াতে আসার আগে যতটুকু প্রত্যাশা ও ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করেছে, তার চেয়ে বেশি পেয়েছি সচক্ষে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেখে। রমজান মাসে পর্যটক কম হওয়ায় সর্বত্র সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে।

হোটেল মালিকরা জানান, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে সুবাতাস ফিরে এসেছে। নভেম্বরের শুরু থেকে ছুটির দিনে কক্সবাজারের বেশিরভাগ হোটেলেই শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা আনোয়ার কামাল বলেন, এতদিন দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে চরম মন্দাকাল গেছে। তবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর হাজার/লাখো পর্যটকের আনাগোনায় আবারও স্বরূপে ফিরেছে কক্সবাজার।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ঈদের টানা ছুটিতে কক্সবাজারের হোটেলগুলোয় শতভাগ কক্ষ আগাম বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ বছর ঈদের টানা ছুটিতে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে আশা করছি।

সূত্র জানায়, বর্তমানে কক্সবাজার শহরের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। এসব হোটেলে প্রায় ২৫-৩০ হাজার পর্যটনকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া মুখপাত্র) জসিম উদ্দিন বলেন, এবার ঈদের ছুটিতে পর্যটক এবং লোকাল মিলিয়ে কক্সবাজারে টানা রেকর্ড মানুষ আসবে। ঈদ সামনে রেখে কক্সবাজারে জনমানুষের নিরাপত্তা বাড়াতে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির ৫০ সদস্যের টিম ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশের সদস্যের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। দুর্ঘটনা, ছিনতাই, পর্যটক হয়রানি রুখতে কক্সবাজার পুলিশ বদ্ধপরিকর। ৫ আগস্টের আগে যেসব সিসি ক্যামেরা অচল হয়েছিল সেগুলো সচল করা হয়েছে। ছিনতাইকারী, ডাকাত, সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চলমান রয়েছে। ঈদের টানা ছুটিতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত