কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার অভিযোগে হওয়া মামলার আসামিদের গ্রেফতারে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জেলা কৃষক দল, যুবদল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল ও শ্রমিকদলের নেতৃবৃন্দ। সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে কুড়িগ্রাম শহরের কলেজ মোড়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই আল্টিমেটাম দেন নেতাকর্মীরা।
এর আগে দুপুরে শহরের পুরাতন ঈদগাহ মাঠ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে কলেজ মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে পুলিশকে আল্টিমেটাম দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক আজাদুন্নবী শামীম বলেন, ‘যারা একটি অরাজনৈতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে উলিপুরে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের গ্রেফতারের দাবিতে আমরা পুলিশ প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি। আসামিদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অভিযুক্তরা দলের কেউ না। তারা এই আগুন সন্ত্রাস করেছে ব্যক্তিস্বার্থে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে। এর নিন্দা জানাই। বিএনপির রাজনীতিতে তার (আব্দুল খালেকের) অবদান অনেক। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে কেউ পার পাবে না।’
জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল হামিদুর জামান হামিদ বলেন, ‘কুড়িগ্রামের রাজনীতিতে একটি পক্ষ গভীর ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে। তাদের এ ষড়যন্ত্র সফল হবে না। বিগত সময়েও তারা এমন ষড়যন্ত্র করেছিল। বিচ্ছিন্ন বিষয়কে তারা রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত করছে। যারা বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের চেষ্টা করেছে, লুটপাট করেছে তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানাই।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন– জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি তারিক নাজমুল রোকন, পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি ওয়াজেত আলী ঝিনুক, জেলা মৎসজীবী দলের সদস্যসচিব মহুবর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক জুয়েল প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উলিপুর থানা চত্বরের গোলঘরে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী দুই দলে বিভক্ত হয়ে দুই কিশোর-কিশোরীর প্রেমঘটিত বিরোধ মীমাংসায় বসেন। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। উলিপুর পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল আলম তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। পরে থানা চত্বরে তিনি অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটে পড়েন। উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আশরাফুলের বাবা বাদী হয়ে জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উলিপুর শহরের বাসিন্দা আবু জাফর সোহেল রানা এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ কবির কাজলসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
আশরাফুলের মৃত্যুর ঘটনার পরপর সোহেল রানা এবং কাজলের বসতবাড়িতে আগুন দেন প্রতিপক্ষের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ৩১ ডিসেম্বর আবু জাফর সোহেল রানার স্ত্রী বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হয়দার আলী মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বুলবুলসহ ৭৮ জন নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।