সাহিত্য বিভাগের নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি ও নাট্যকার অপু মেহেদী। জন্ম ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ সালে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকত্তোর। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ঘুমের প্রেসক্রিপশন, ট্রেঞ্চে ফিরে তাকদুম; নাটক: রবীন্দ্রনাথ এন্ড কোম্পানি, উনপুরুষ; গল্পগ্রন্থ: গৈরিক তাড়ৃয়ার তান এবং সম্পাদনা করেছেন দ্রোহ দাহ স্বপ্নের মামুনুর রশীদ; আরণ্যকের নাট্যচর্যা: সৃজনে সংগ্রামে নন্দনে।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে?
অপু মেহেদী: ঠিক নির্দিষ্ট কোনো বিষয় বা অনুভূতির কথা বলা যাবে না। তবে ভেতর থেকে স্পার্ক না করলে কবিতা লেখা মুশকিল। সেটা হতে পারে ছোট্ট একটা প্রজাপতির উড়ে যাওয়া কিংবা দুনিয়া কাঁপানো কোনো ঘটনা। হতে পারে নিছক কোনো ছেলেমানুষী অনুভূতি কিংবা কোনো গভীর আকর্ষণ।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী ধরনের থিম বা বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
অপু মেহেদী: যেকোনো বিষয় বা থিমেই কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে যে বিষয় বা থিমেই লিখি না কেন, তার সাথে নিজস্ব দর্শন যুক্ত করার চেষ্টা করি। লেখার সময় ‘কবি’ শিরোনামক বিশেষ আসক্তিটিকে, প্রকৃত উপলব্ধির যাত্রাপথ থেকে দূরে সরিয়ে রেখে লেখার চেষ্টা করি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখেন, নাকি ধীরে ধীরে শব্দ সাজান?
অপু মেহেদী: তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় হয়ত কোনো শব্দ, শব্দবন্ধ, লাইন বা বিষয় চলে আসে। তবে পুরো কবিতাটা একটু সময় নিয়েই লিখি। কেননা আমি আমার কবিতার উপস্থাপন বা প্রকাশভঙ্গী নিয়ে বেশ সচেতন। একটি কবিতার প্রকাশভঙ্গীই সেই কবিতার স্বাতন্ত্র নির্ধারণ করে দেয় বলে আমি মনে করি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার ভাষা ও শৈলী কীভাবে বেছে নেন?
অপু মেহেদী: লেখালেখির ক্ষেত্রে আমি বেশ নিরীক্ষাপ্রবণ। প্রচলিত ধারণার ধারামুক্তি ঘটিয়ে, পরবর্তী পর্যায়টি খোঁজার প্রবণতা আমার মধ্যে অনেক বেশি। কেননা নিরীক্ষা ছাড়া নতুন কিছু সৃষ্টি সম্ভব না। এই নিরীক্ষার মধ্য দিয়েই আমি আমার কবিতার ভাষা ও শৈলী বেছে নেয়ার চেষ্টা করি।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন কবির প্রভাব আপনার লেখায় আছে?
অপু মেহেদী: আমি যেমন কবিতা লিখি বা লিখতে চাই তাতে অন্য কোনো কবির প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। তবে যাদের কবিতা পড়ে আমি কবিতায় মগ্ন হই তাদের মধ্যে জীবনানন্দ দাশ, আল মাহমুদ, উৎপলকুমার বসু, সিকদার আমিনুল হক, আবিদ আজাদ, আব্দুল মান্নান সৈয়দ উল্লেখযোগ্য।
বাংলা ট্রিবিউন: কথাসাহিত্যের চর্চা করেন? এ চর্চা আপনার কবিতায় কতটুকু প্রভাব রাখে?
অপু মেহেদী: গল্প বা উপন্যাস লিখি না। নাটক লিখি। পারফরম্যান্স আর্টের পাশাপাশি নাটক একধরনের কথাসাহিত্যই। এক্ষেত্রে কবিতা ও নাটক উভয়ই উভয়ের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম কবিতার বই সম্পর্কে কিছু বলুন। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?
অপু মেহেদী: আমার প্রথম কবিতার বই ‘ঘুমের প্রেসক্রিপশন’। প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৭ সালে। এটি লিখতে গিয়ে যে অনুভূতি হয়েছিল তা কয়েক লাইনে লেখা সম্ভব নয়। তবে এটা বলতে পারি ‘ঘুমের প্রেসক্রিপশন’ লিখতে গিয়ে আমি যে ঘোরের মধ্যে পড়েছিলাম সেই ঘোরের সন্ধানে আমি সদা ব্যস্ত থাকি।
বাংলা ট্রিবিউন: সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ঘটনা কি আপনার কবিতায় প্রভাব ফেলে? যদি ফেলে, তবে কীভাবে তা প্রকাশিত হয়?
অপু মেহেদী: অবশ্যই প্রভাব ফেলে। তবে তা প্রকাশের ক্ষেত্রে বিমূর্ততার আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করি। কেননা বিমূর্ততাই একটি বিষয়কে ইন্ডিভিজুয়াল থেকে ইউনিভার্সেলে পরিণত করতে সাহায্য করে।
বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?
অপু মেহেদী: পাঠক মূলত দুই প্রকার। সাধারণ পাঠক আর লেখক পাঠক। সাধারণ পাঠকের কোনো মন্তব্য আমার লেখায় পরিবর্তন আনে না। তবে লেখক পাঠক অর্থাৎ যে পাঠক নিজেও লেখালেখি করে তাদের কোনো মন্তব্য কখনো কখনো লেখায় পরিবর্তন আনে।
বাংলা ট্রিবিউন: ভবিষ্যতে কী ধরনের কবিতা লিখতে চান? নতুন কোনো ধারা বা শৈলীতে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?
অপু মেহেদী: একজন কবি কখনোই তার সমসাময়িক সময়ে অবস্থান করে না। সে অবস্থান করে অনাগত ভবিষ্যতে। তাই ভবিষ্যতে আমি আমার নিরীক্ষাপ্রবণতা নিয়ে তারও ভবিষ্যতের কবিতা লিখতে চাই।