আসন্ন ঈদে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকে আগে থেকেই পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু দূরত্ব আর সময়ের চিন্তায় গন্তব্যে নির্বাচন করতে পারছেন না। তবে আপনি চাইলেই ঈদের ছুটিতে কাজে লাগাতে পারেন সহজেই। আশপাশে কোথায় কি আছে জেনে সেখানে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যেতে পারেন। যারা ঝালকাঠির বাসিন্দা তারা চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন হাজিবাড়ি জামে মসজিদে।
নান্দনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত এ মসজিদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সুযোগ পেলেই দূরদূরান্তের মানুষ ছুটে আসে। মসজিদের মিনারসহ সবদিকে অনন্য স্থাপত্য শৈলীতে নির্মাণ কারুকাজ সবাইকে মুগ্ধ করছে। দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার কানুদাসকাঠিতে অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে এটি হাজিবাড়ি মসজিদ নামে পরিচিত।
জানা গেছে, ১৯৮১ সালে এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা আব্দুর রব বুলবুল। এরপর ২০২১ সালে সাবেক এমপি বজলুল হক হারুন (বিএইচ হারুন) নিজ অর্থায়নে এটিকে নতুন করে পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর মসজিদটির নাম দেয়া হয় মনিরা হারুন জামে মসজিদ। যেখানে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর ছোঁয়া দেওয়া হয়। মসজিদের ছাদে একই সাইজের চারপাশে চারটি, মাঝে বড় একটি গম্বুজ ও দুটি মিনার আছে।
মসজিদটি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এর সুসজ্জিত গম্বুজ, সুদৃশ্য মিনার ও কারুকার্যময় খোদাই কাজ দর্শকদের মন কাড়ে। মসজিদের নকশায় আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে, যা একে অন্য সব মসজিদের তুলনায় আলাদা করে তুলেছে। নির্মাণের পর থেকেই মসজিদটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যা এখন দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
নামাজ আদায়ের পাশাপাশি মসজিদটির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন এখানে বহু দর্শনার্থী আসেন। স্থানীয়রা বলছেন, এটি এলাকার অন্যতম নান্দনিক মসজিদ এবং এখানে প্রবেশ করলেই প্রশান্তি লাগে।
স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, পুরোনো মসজিদটি ছোট হওয়ায় নামাজ আদায়ে অসুবিধা হতো। নতুন এই মসজিদ নির্মাণের ফলে এখন স্বাচ্ছন্দ্যে নামাজ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে। এমনকি বাইরে থেকেও বহু মানুষ এখানে এসে নামাজ আদায় করছেন।
স্থানীয় মুসল্লি মো. সিদ্দিক মুনশি বলেন, ‘আগের মসজিদটি ছোট ছিল, জায়গা সংকুলান হতো না। এখন আল্লাহর রহমতে সুন্দর ও প্রশস্ত মসজিদ পেয়েছি। অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ এখানে আসেন।’
দর্শনার্থী মাহিন খান রোমান বলেন, ‘আমি ফেসবুকে দেখে এখানে এসেছি। সত্যিই মসজিদটি অসাধারণ! এত সুন্দর মসজিদ আগে কোথাও দেখিনি। এখানে এলে একধরনের মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়।’
মসজিদের সভাপতি মাওলানা মোস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, মরহুম মাওলানা আবদুর রব বুলবুলে প্রথম মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি নিজের বাড়িতে বিল্ডিং তৈরি না করে এই জামে মসজিদ তৈরি করেছেন। এটি পরিসরে ছোট থাকায় পরবর্তী সময়ে তার ছেলে ২০২১ সালে মসজিদটি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন কারুকাজে পুনর্নির্মাণ করেন।
তিনি আরও বলেন, মসজিদটি দক্ষিণ অঞ্চলের অন্যান্য ইসলামি স্থাপত্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। মসজিদটি সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি দূরদূরান্তের মানুষ এসে জুমার নামাজ আদায় করেন।
জামে মসজিদ শুধু মুসলমানদের ধর্মীয় একটি উপাসনালয় নয়, এটি স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শনও বটে। ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি এর নান্দনিক রূপও মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে। যারা সৌন্দর্য ও প্রশান্তির সন্ধানে আছেন, তাদের জন্য এই মসজিদ অবশ্যই এক দর্শনীয় স্থান।
জেএস/এএসএম