কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল বিকেলে শুকুর আলী শাহ ফকিরের মাজারে ৬৬তম ওরসের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে সন্ধ্যায় মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ শেষে রাতে বাউলগান হওয়ার কথা ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ইমাম পরিষদের নেতা–কর্মী, স্থানীয় কয়েকটি মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় কয়েকজন মাজারের অদূরে অর্জুন নালাই জামে মসজিদে জড়ো হন। সেখানে তাঁরা শুকুর আলী শাহ ফকিরের মাজারে ওরস ও গানের আয়োজন বন্ধের দাবি জানান। পরে রাত ৮টার দিকে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় ধামরাই থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শেষে ওরস বন্ধের কথা জানালে আয়োজনকারীরা ওরস বন্ধ করেন। এরপর তাঁরা আয়োজকদের গ্রেপ্তারসহ মুচলেকা নেওয়ার দাবি জানান। তবে পুলিশ এতে রাজি না হয়ে চলে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর তাঁদের একটি অংশ মাজারের কার্যক্রম বন্ধের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করবেন জানিয়ে মসজিদ ত্যাগ করেন। এরপর রাত ১০টার দিকে সেখানে উপস্থিত অপর অংশের ৫০-৬০ জন দল বেঁধে মাজারটিতে ঢুকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। সেখানে থাকা দুটি কবরসহ বসতবাড়ির একটি টিনের ঘর পুরোপুরি এবং অপর একটি ঘরের বেড়ার টিন ভাঙচুর করা হয়। হামলার পরপরই শুকুর আলীর দুই ছেলে আতঙ্কে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যান। তবে শুকুর আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম হামলাকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেলের দিকে বহিরাগত শতাধিক মুসল্লি মসজিদে জড়ো হন। এরপর তাঁরা মাজারে গান–বাজনা বন্ধ করতে বলেন। স্থানীয় কিছু লোকও ছিলেন সেখানে। তাঁরা মসজিদের মাইকে ওই মাজারে সিজদা দেওয়া, মানত করা, পীরকে সিজদা করা চলবে না বলে স্লোগান দেন। রাত ১০টার দিকে ৫০-৬০ জন মুসল্লি গিয়ে মাজার ভেঙে ফেলেন।
আমেনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাজারে মোমবাতি আর আগরবাতি জালাইতাম। বহু বছর ধইরা ওরস হয়। গতকাল মুসল্লিরা নিষেধ করছিল ওরস করতে, আমরা বন্ধ করছিলাম। এরপর রাইতে ৫০-৬০ লোক আইসা মাজার ও ঘর ভাইঙ্গা দিছে। ওরা আমারে মারতে চাইলে মারুক। ভয়ে পোলারা বউ–পোলাপান নিয়া চইলা গেছে। পুলিশ আইছিল, কইছে মামলা করতে। আমরা মামলা করলে মামলা চালামু কেমনে।’