রমজানের আগেই শুরু হয় ঈদ বাজারের প্রস্তুতি। ঝক্কি কমাতে অনেকে আগেই সেরে রাখেন কেনাকাটা। দর্জি পাড়ায়ও বাড়ে ব্যস্ততা। প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদকে কেন্দ্র করে প্রস্তুত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাকের বাজার চট্টগ্রামের ‘টেরিবাজার’।
ভারতীয় পোশাকের আধিক্য এখন এ বাজারে আর নেই। সে জায়গা দখল করেছে দেশীয় ও পাকিস্তানি পণ্য। আড়তগুলোয় মজুত রয়েছে বাহারি সব পণ্য। জমে উঠেছে বেচাকেনাও। নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, সে সঙ্গে বাড়ছে অর্থনৈতিক চাপ- তা সত্ত্বেও ঈদ ঘিরে বিক্রি বাড়বে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর কালবেলাকে বলেন, ব্যবসায়ীরা এবারও ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত বেচাকেনা আশানুরূপই হচ্ছে। আমাদের বাজারটা মূলত শুরু হয় শবেবরাতের পর থেকেই। ১০-১৫ রমজান পর্যন্ত এই পাইকারি বেচাকেনা চলবে। এবার শতকোটি টাকার বেচাকেনা হবে বলে আমরা আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় পণ্য বা ডিজাইনের যে আধিপত্য ছিল, তা এখন আর নেই। পাকিস্তান থেকে কিছু পণ্য এসেছে, তবে তা বড় আকারের নয়। কিন্তু পাকিস্তানি পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ রয়েছে। ভারতবিদ্বেষের কারণে সেখান থেকে তেমন পণ্য আসেনি। এ ছাড়া বর্তমানে দেশের টেক্সটাইল খাত অনেক উন্নত। তাই ভারতীয় ডিজাইন ও কোয়ালিটির সঙ্গে টেক্কা দিয়ে দেশি কোম্পানিগুলো ভালো ভালো কাপড় তৈরি করছে। দেশি কাপড়েরও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ছিনতাইকারীদের দমনসহ সব অপরাধ রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ২০ জনের বেশি নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের বকশিরহাটের পুরোনো ভবনের নিকট দূরত্বে গড়ে উঠেছে শখানেক অত্যাধুনিক মার্কেট। সেখানকার প্রায় ৩ হাজার ছোট-বড় দোকানে পাওয়া যায় দেশীয় ও আমদানি করা হাল ফ্যাশনের পোশাক। কুমিল্লা, নোয়াখালী, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা এই বাজার থেকে পাইকারিতে পোশাক কেনেন। দাম কম হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারাও ভিড় করেন এই বাজারে। শাড়ি কেনার জন্য ভিড় জমে মাসুম ক্লথ স্টোর, বধুয়া শপিং, চিটাগাং শাড়ি হাউস, মেগামার্ট, সানা ফ্যাশন, রাজস্থান, রাজপরী, জারা শপ, আলিশা, জাবেদ ক্লথ স্টোর, বৈঠক বাজার, ভাসাবি, মনে রেখ, শাহ আমানত, পরশমণি, শিরমণি, রাঙ্গুলি, ফেমাস, হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স, মল টুয়েন্টি ফোর, মোহাম্মদীয়া, হ্যালো ফ্যাশন, গোল আহমদ, নিউ রাজস্থান, মৌচাক, আলমগীর, বাগদাদ অ্যাম্পোরিয়াম, নিউ আজমিরসহ আরও বেশ কয়েকটি নামিদামি শপিংমলে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক মাস নানা সংকটের কারণে রপ্তানি করতে পারেনি গার্মেন্টস কোম্পানিগুলো। দেওয়া যায়নি শিপমেন্টও। তাই গুণমান সম্পন্ন পণ্যই আসছে এসব বাজারে। অন্যদিকে ভারতীয় পণ্যের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাই সেখান থেকে তেমন কাপড় আসেনি এবার। ফলে বাজার কিছুটা দখলে নিয়েছে পাকিস্তানি পণ্যে।
শনিবার টেরিবাজারে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন গৃহিণী রুমানা ফেরদাউস। তিনি জানান, এখানে দরদাম করে কেনা যায়। তাছাড়া, কালেকশনও বেশ ভালো। তাই ঈদের বাজার বলতে টেরিবাজারকেই বুঝি। তবে এবার দাম কিছুটা বেশি।
টেরিবাজারের ঐতিহ্যপূর্ণ মেগা শপ মনেরেখ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক আবু হুরায়রা বলেন, ঈদ উপলক্ষে চাহিদার দিকটা মাথায় রেখে কাতান, লিনেন, জামদানি, সুতি, নেট, জর্জেট, শিফন ও ডিজিটাল প্রিন্টের রকমারি কাপড় আমদানি করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশি কাপড়ের চাহিদাও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।
নিউ রাজপরীর স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দিন মানিক বলেন, ‘বাছাই করে পোশাক কেনার সুযোগ টেরিবাজারে বেশি। দামও তেমন বেশি নয়। তাই ক্রেতারা এখানে বেশি আসেন।’
টেরিবাজারের অঙ্গশ্রী বস্ত্রালয়ের বিক্রয়কর্মী অভি বলেন, আমরা কাপড় আমদানি করি। আবার নিজেদেরও আছে। এখানে সারাবছর জমজমাট কেনা-বেচা হলেও ঈদের সময়টা ভিন্ন। এই সময়ে সারাবছরের বিক্রির দ্বিগুণ বেশি বিক্রি হয়। আশা করছি, এবারও ভালো বেচাকেনা হবে।
আগাম কেনাকাটা প্রসঙ্গে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, আমাদের টেরিবাজার ঈদমুখী বাজার। এখানকার ৯০ শতাংশ দোকানই কাপড়ের। শবেবরাতের পর থেকেই জমে উঠেছে বেচাকেনা। রোজা শুরুর পর একটু ভিড় কম থাকবে, ওই সময়ে মানুষ তারাবির নামাজে ব্যস্ত থাকে। আবার বাজার জমতে শুরু করবে ১৫ রোজার পর। এই বছর ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি। টেরিবাজারের রাস্তাটা খুব সরু। তাই যানজট নিরসন এবং নারী ও শিশুদের সুবিধার্থে সিএমপি কমিশনার বরাবর আবেদন করা হয়েছে।