Homeদেশের গণমাধ্যমেদীপংকর দীপকের তিনটি অনুগল্প

দীপংকর দীপকের তিনটি অনুগল্প


স্বপ্নের পুলিশ

বোহেমিয়ান স্বভাবের সাগর বিদ্রোহী কবির সঙ্গে সুর মিলিয়ে ডায়রিতে লিখল, ‘আমিও মানি না কোন আইন।’ এরপর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর আন্দোলনে বেকার সহপাঠিদের নিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখলো শাহবাগ মোড়।

পরদিন সন্ধ্যায় তার কাছের বন্ধুটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মেয়েকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করলো। এর কয়েকদিন পরই পুলিশে চাকরি হলো সাগরের। বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর শপথ অনুষ্ঠানে সে প্রতিজ্ঞা করল, ‘আমি সর্বদা দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলবো।’

কয়েকদিন বাদে ফোর্সসহ তাকে পাঠানো হলো শহবাগের আন্দোলন বন্ধ করতে। প্রথমে সে হ্যান্ডমাইকে রাস্তা ছেড়ে দিয়ে সবাইকে ঘরে ফেরার আহ্বান জানালো। তা না শুনলে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিলো আন্দোলনকারীদের।

এরপর সাগরকে দায়িত্ব দেওয়া হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ মেয়েটিকে খোঁজার। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই সে চৌকস পুলিশ অফিসারের মতো মেয়েটিকে উদ্ধার করলো। আর থানায় ধরে আনলো বন্ধুটিকে।

হঠাৎ বন্ধুর চিৎকার। ধুম করে ঘুম ভেঙে গেল সাগরের। ধড়ফড় করে শোয়া থেকে উঠে বিছানায় বসে পড়ল সে। তারপর নিজের সারা গায়ে একবার চোখ বোলালো। মাথায় হাত দিয়ে দেখলো ক্যাপ নয়, নরম চুল। স্বস্তি ফিরে পেলো সে। তারপর আলগা করে গেঞ্জিটা টেনে ধরে বুকে থু থু ছিটালো।

এরপর মেসের বন্ধু সোহাগ ফের মনে করিয়ে দিলো, আজ কিংবা কালকের মধ্যেই কিন্তু তাকে চাকরিতে জয়েন করতে হবে। কিন্তু সাগর সাফ জানিয়ে দিলো যোগদান করবে না। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রেগেমেগে নিজ কক্ষে চলে গেল সোহাগ।

ঠিক তখনই বেজে উঠলো সাগরের মোবাইল ফোন। ওপাশ থেকে তার বাবা বললেন, ‘ঘুম ভাঙল, বাবু। ঠিকঠাকভাবে জয়েন করবি কিন্তু। এই বুড়ো বয়সে সংসারের ভার নিতে আর পারছি না। তুই বেতন পাওয়া শুরু করলে আমি আর বাজারে সবজি বিক্রি করবো না। তোর মায়ের টিউমারটাও অপারেশন করে ফেলবো।’

ফোন রাখার পর কিছুক্ষণ জানালা দিয়ে সকালবেলার শান্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো সাগর। পরে হ্যাঙার থেকে জামাটা নিলো। প্যান্ট পরলো। হাত থেকে খুললো শখের ব্রেসলেট। অবশেষে বন্ধুকে গিয়ে বলল, না, কাল নয়; আজই আমি পুলিশে জয়েন করতে যাচ্ছি দোস্ত। শুনে খুব খুশি হলো সোহাগ।

****

সাংবাদিক

সিনিয়র সাংবাদিক হক সাহেবের মোবাইলে কল এলো অচেনা আরেক সাংবাদিকের। ওপাশ থেকে পরিচয় দিয়ে বললেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আছে হক সাহেব। অভিযোগ হলো খুনের…’। এ কথা বলতেই কেটে গেলো কল।

হক সাহেবের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। ভ্রু কুঁচকে রইলো। মুহূর্তেই ঘেমে উঠলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে সহকর্মীদের কাছে খবর নিলেন, তার বিরুদ্ধে কোনো নিউজ হয়েছে কি না। থানায় ফোন করে জানতে চাইলেন মামলার খোঁজ-খবর। কিন্তু কেউ কোনো তথ্য দিতে পারলেন না।

এর ঠিক দু’দিনের মাথায় চাকরিটা ছেড়ে দিলেন হক সাহেব।

****

ব্যাংকার

লোকটি হাসপাতাল থেকে তাড়াহুড়ো করে পাশের ব্যাংকে ঢুকলো। টেবিলে সারি সারি সাজানো টাকার বান্ডেল। একটু ঢোক গিলে সামনের সুন্দরী ব্যাংকারকে বলল, ‘আমার ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। জরুরি অপারেশন। আমাকে এক বান্ডেল টাকা ধার দিন। আগামী মাসে এসে দিয়ে যাবো।’

সুন্দরী ব্যাংকার লোকটির দিকে এক পলক তাকালো। অতঃপর চেয়ার থেকে উঠে লোকটির হাতে এক বান্ডেল টাকা ধরিয়ে দিলো।

ঠিক এ সময় পাঠকেরা লেখককে বলল, ‘হালারপুত, গাঁজাখুরি গল্প শুনাইতে আসো! এরকম ব্যাংকার পৃথিবীতে কোনো দিন ছিল না।’

এসইউ/জিকেএস



Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত