Homeদেশের গণমাধ্যমেথার্টি ফাস্টে ফানুস উড়িয়ে মৃত্যু ফাঁদ আর নয়

থার্টি ফাস্টে ফানুস উড়িয়ে মৃত্যু ফাঁদ আর নয়


বছরের শেষ দিন অর্থাৎ থার্টি ফাস্ট নাইটে পুরোনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নানা আয়োজন করা হয়। পাশ্চাত্য দেশে এই সংস্কৃতি বহুকাল ধরে চলে আসছে। তবে বাঙালিও এই আয়োজন থেকে পিছিয়ে নেই। কিছু বছর ধরে দেশেও বিভিন্নভাবে থার্টি ফাস্ট নাইট পালন করা হচ্ছে।

উৎসব প্রিয় বাঙালির উদযাপনে যুক্ত হয়েছে আতশবাজি, পটকা, ফানুস। যা আনন্দ আয়োজন দ্বিগুণ করলেও তৈরি করছে মৃত্যু ফাঁদ। ফানুসের আগুনে পুড়ছে ঘরবাড়ি, দোকান। শুধু ২০২৩ সালের শুরুতেই আতশবাজি পোড়ানো বা ফানুস ওড়ানোর অগ্নিকাণ্ডে গতবছর আনুমানিক ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতি গুণতে হয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছিল।

এমনকি গতবার ফানুসের আগুনে নতুন চালু হওয়া মেট্রোরেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে সকালে ট্রেন চালু হতে দুই ঘণ্টা বিলম্ব হয়। ২০২২ সালের থার্টি ফাস্ট নাইটে আতশবাজি ও ফানুস থেকে প্রায় একশ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। সেসব অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয় নতুন বছরের শুরুতেই।

২০২১ সালের প্রথম প্রহরে আতশবাজি ও ফানুস থেকে ১৬টি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৪ লাখ ৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছিল। আতশবাজির উচ্চ শব্দে তানজিম উমায়ের মাহমুদুল হাসান নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল।

২০২০ সালে একই রকম ৫০টি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ২০১৯ সালে ৭২টি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা এবং ২০১৮ সালে ৪২টি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৫৬ লাখ ৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।

যদিও প্রতি বছরই ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ সামনে রেখে ঢাকায় সব ধরনের আতশবাজি, মশাল মিছিল, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো আগেই নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তারপরও মানুষ এসব নিষেধাজ্ঞার তোয়াকাই যেন করে না। আপনার আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ফানুস যে হতে পারে কারো মৃত্যু ফাঁদ তা যেন জেনেও না জানার ভান করে থাকছেন।

একজন সচেনত নাগরিক হিসেবে আপনার আমার সবার উচিত হবে অন্যের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ফানুস উড়িয়ে মৃত্যু ফাঁদ তৈরি না করা। বৈদ্যুতিক তারের জঙ্গলের শহর বা লোকালয়ে উড়ানোর জন্য নয়। এমনি আনন্দ উদযাপন করতেও এই ফানুস বানানো হয়নি।

ফানুসের ইতিহাস

‘আকাশ লণ্ঠন’ বা ফানুস একটি চীনা শব্দের অনুবাদ কিন্তু এটিকে ‘আকাশ মোমবাতি’ বা ‘অগ্নি বেলুন’ নামেও উল্লেখ করা হয়। আর বৌদ্ধ পরিভাষায় এর নাম হলো, ‘আকাশ-প্রদীপ’।

লোক কথায় রয়েছে গৌতম বুদ্ধ অর্থাৎ রাজকুমার সিদ্ধার্থ জাগতিক সব দুঃখ মুক্তি লাভের আশায় রাজ্য, রাজত্ব, ভোগ-বিলাস, ধনকুম্ভ সব ত্যাগ করে সংসার পরিত্যাগ করেন শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে। রাজ-আবরণ ছন্দককে বুঝিয়ে দিয়ে তিনি সন্ন্যাস-ব্রত গ্রহণ করার পর ভাবলেন, ‘আমি এখন সন্ন্যাসী, রাজকীয় বাহারি চুল আমার কি প্রয়োজন?’

যেমন ভাবা তেমন কাজ, সঙ্গে সঙ্গে ধাঁরালো তরবারি দিয়ে চুলের গোছা কেটে নিয়ে মনে মনে সংকল্প করলেন, ‘যদি বুদ্ধ হওয়ার মতো সব গুণ আমার মধ্যে থাকে তাহলে ঊর্ধ্বদিকে নিক্ষিপ্ত চুলের গোছা মাটিতে না পড়ে আকাশে স্থিত থাকুক।’ এই সংকল্প করে তিনি চুলের গোছা উপরের দিকে নিক্ষেপ করলেন। খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার, একটি চুলও মাটিতে পড়ল না।

বৌদ্ধধর্ম মতে, স্বর্গের ইন্দ্ররাজা চুলগুলো হীরা, মণি, মানিক্যখচিত স্বর্ণপাত্রে ধারণ করে তাবতিংস স্বর্গে উক্ত কেশ-ধাতু স্থাপন-পূর্বক একটি চৈত্য নির্মাণ করেন এবং এই চৈত্যের নাম রাখা হয় ‘চুলামনি চৈত্য’। স্বর্গের দেবতারা এখনও এর পূজা করেন।

কিন্তু পৃথিবীর বুদ্ধভক্ত পূজারীরা তো আর পূজার জন্য স্বর্গে যেতে পারেন না। তাই তারা পরম শ্রদ্ধায় কাগজের ফানুস তৈরি করে একটি বিশেষ দিনে ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে চুলামনি চৈত্যকে পূজা করার উদ্দেশ্যে আকাশ-প্রদীপ হিসেবে ফানুস উড়িয়ে থাকেন।

ধর্মীয় গাথা বা মন্ত্র পাঠ করে খালি পায়ে বৌদ্ধরা ফানুস উড়িয়ে দেন। মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে সাধু-ধ্বনির সুরে সুরে ফানুস উড়ানো হয়। আষাঢ়ী পূর্ণিমাতে বৃষ্টি ও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় অনেক সময় ফানুস ওড়ানোর পরিবেশ এবং সুযোগ কোনোটিই থাকে না। তাই প্রবারণা পূর্ণিমা বা আশ্বিনী পূর্ণিমায় দিনে ফানুস ওড়ানো হয়। তবে এখন যে কোনো আনন্দ আয়োজনেই ফানুস ওড়ান সবাই। থার্টি ফাস্টের রাতে আকাশ ছেয়ে যায় ফানুসে। যা বড় দুর্ঘটনার কারণ।

কেএসকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত