Homeদেশের গণমাধ্যমেঢাকা-দিল্লির অস্বস্তিকর সম্পর্কের সুযোগ নিতে পারে চীন ও পাকিস্তান

ঢাকা-দিল্লির অস্বস্তিকর সম্পর্কের সুযোগ নিতে পারে চীন ও পাকিস্তান


জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। এরপর থেকে বাংলাদেশের প্রতি প্রকাশ্যে বৈরী আচরণ করছে ভারত। শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, বাংলাদেশে মুসলিম উগ্রবাদের উত্থানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ভারত সরকারসহ দেশটির রাজনীতিবিদ, থিংকট্যাংক, অ্যাকাডেমিয়া, মিডিয়াসহ প্রায় সবাই এক সুরে নেতিবাচক কথা বলছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে এর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। তাতে পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করে, ঢাকা-দিল্লির এই অস্বস্তিকর সম্পর্ক অব্যাহত থাকলে এর সুযোগ নিতে পারে চীন ও পাকিস্তান।

ঢাকার বক্তব্য হচ্ছে—পারস্পরিক সম্মান ও লাভের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় সরকার। অপরদিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের সময়ে তিনি বলেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করবে তার সরকার। এ প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারত কতটুকু সম্পর্ক বজায় রাখবে সেটি এখন দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উষ্ণ বা অস্বস্তিকর সম্পর্কের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের মতো কূটনীতিতেও ‘শূন্যতা’ থাকে না। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আস্থার ঘাটতি থাকলে সেটির সুযোগ নেবে চীন ও পাকিস্তান। এটিকেই বাস্তবতা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সাবেক কূটনীতিকদের মতে, বর্তমানে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে অস্বস্তিকর সম্পর্ক চলমান রয়েছে। কিন্তু এরপরও ভারতের জন্য ক্ষতিকর হয়—এমন কোনও বিষয়ে বাংলাদেশ নিজেকে জড়াতে চাইবে না। তবে, ভারতের জন্য লাভজনক, তেমন বিষয়ে হয়তো উৎসাহ কম থাকবে ঢাকার।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘বৃহৎ ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বিভিন্ন শক্তি তাদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায়। এই অঞ্চলকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিপরীতধর্মী অবস্থান এবং আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ওয়াশিংটনের চীনবিরোধী মনোভাবে দিল্লির সমর্থনের বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার।’

তিনি বলেন, ‘এই প্রেক্ষাপটে বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পাশে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন শক্তির বিভিন্নভাবে চেষ্টা করাটাই স্বাভাবিক।’

ভারতের অবস্থান

আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেক পুরোনো। ২০০৯ সালে জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে ভারতকে ছাড় দেয়নি আওয়ামী লীগ। বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র সীমানা নির্ধারণের জন্য ভারতের মতো বড় রাষ্ট্রকেও ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক কোর্টে নিয়ে গিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তীকালে অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের সহায়তার প্রয়োজন হয় আওয়ামী লীগের। তখন থেকে জাতীয় স্বার্থ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে আলোচনার সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসে।

এ বিষয়ে আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের একটি স্বস্তিকর অবস্থান ছিল। শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার কারণে ভারতের ওই স্বস্তিকর অবস্থান এখন আর নেই।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সেটির বড় কারণ হচ্ছে—তাদের স্বস্তিকর অবস্থানের পরিবর্তন। এখন তাদের নতুন করে আবারও বাংলাদেশের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, যা তাদের জন্য পীড়াদায়ক।’

চীন ও পাকিস্তানের অবস্থান

ভারত মহাসাগর অঞ্চলে প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় ওয়াশিংটন ও বেইজিং। ফলে এই অঞ্চলে সব দেশকে পাশে পাওয়ার জন্য দুদেশেরই বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম রয়েছে। ভারতের প্রভাব বেশি থাকায় বাংলাদেশে চীনের বিচরণ ছিল কিছুটা সীমিত। বর্তমানে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের নেতিবাচক অবস্থানের সুযোগ নিতে পারে বেইজিং। আবার আওয়ামী লীগের আমলে পাকিস্তানের সঙ্গে অত্যন্ত সীমিত আকারে যোগাযোগ রক্ষা করতো বাংলাদেশ। এমনকি মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বা বাণিজ্য ক্ষেত্রেও ছিল প্রবল প্রতিবন্ধকতা।

এ বিষয়ে আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘চীনের কূটনীতি অনেক বেশি দ্রুত কার্যকর। ৫ আগস্টের পরপরই তারা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। অপরদিকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দল বেইজিং সফর করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের নতুন করে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ দেখে মনে হচ্ছে—চীন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশে তাদের প্রভাব আগের থেকে বাড়তে পারে।’

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘আগে পাকিস্তানিদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অলিখিত একটি বাধা ছিল, যা এখন আর নেই। চট্টগ্রাম ও করাচি বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে এবং পাকিস্তানি কনটেইনার আগের মতো গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষা করা হয় না। আশা করা হচ্ছে ঢাকা ও করাচির মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচলও চালু হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছে এবং ঢাকার প্রতি দিল্লির নেতিবাচক মনোভাবের পূর্ণ সুযোগ নেবে ইসলামাবাদ।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত