ছুটির দিনে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ব্যাপক লোকসমাগম হয়েছে। মেলার স্টলগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ায় বেড়েছে বেচাকেনাও। মেলায় সোয়া দুই লাখের বেশি লোক লোকসমাগম হয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকার পূর্বাচল উপশহরের ৪ নম্বর সেক্টরে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিকাল থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে মেলার গেটে কাউন্টারগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড়। গেট দিয়ে প্রবেশ করার পর দেখা যায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। মেলার একপাশে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যা হতেই সেখানে উৎসুক দর্শনার্থীদের ভিড়। তারা গানের সঙ্গে নেচে-গেয়ে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করেন।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন সারা রহমান। তিনি বলেন, ‘আজ মেলায় অনেক ভিড় হয়েছে। বিগত আসরের তুলনায় এবার অনেক বেশি লোক সমাগম হয়েছে। তা ছাড়া মেলার একপাশে কনসার্টের আয়োজন করেছে। এটা বেশ ভালো লেগেছে। সবাইকে নিয়ে বেশ উপভোগ করেছি।’
যাত্রাবাড়ী থেকে মেলায় বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিকাল থেকে মেলায় অনেক লোকসমাগম হয়েছে। ছুটির দিন হওয়ার অনেক ভিড় হয়েছে। ভিড়ের কারণে মেলায় ঢুকতে কষ্ট হয়েছে। তবু বন্ধুদের নিয়ে মেলা ঘুরে দেখেছি। অনেক কিছু কেনাকাটা করেছি।’
ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, ‘মেলায় লাখ লাখ লোকসমাগম হয়েছে। বেচা-বিক্রি অনেক বেড়েছে। গত আসরের তুলনায় এবার বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে।’
কসমেটিক পণ্যের ব্যবসায়ী রাফসান আলী বলেন, ‘মেলায় বিক্রির পরিমাণ খুব ভালো। বিভিন্ন পণ্যের ওপরে ডিসকাউন্ট দেওয়াসহ শীতের তীব্রতা কম থাকায় লোকসমাগম এবার বেশি হয়েছে।’
এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলার পরিচালক বিবেক সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় অনেক লোকসমাগম হয়েছে। দুই লাখ ২৫ হাজার দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেছে। রাতে এই সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে। আমরা আয়োজনের কোনও কমতি রাখিনি। আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি লোকসমাগম হয়েছে।’
ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা করায় আগে থেকে টিকিট কেটে সহজেই মেলায় প্রবেশ করা যাচ্ছে। আবার কেউ কাটতে না পারলে মেলা প্রাঙ্গণে এলে টিকিট বুথ থেকে কেটে দেওয়া হচ্ছে। ফলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার জন্য সময়ক্ষেপণ কিংবা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না ক্রেতা-দর্শনার্থীদের।
মাসব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন খোলা থাকছে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, এবারের মেলার আসরে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬২টি প্যাভিলিয়ন, স্টল ও রেস্তোরাঁ আছে। দেশি উৎপাদক-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশি বস্ত্র, যন্ত্রপাতি, কার্পেট, প্রসাধনসামগ্রী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, আসবাব, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি সামগ্রী, চামড়া, আর্টিফিশিয়াল চামড়া, জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, খেলার সামগ্রী, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন, পলিমার, হারবাল, টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, গৃহসজ্জার উপকরণ ইত্যাদি মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে।