শেখ হাসিনার ম্যুরাল ও নৌকা ভাঙচুরের ঘটনায় শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা শিক্ষার্থীর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ সময় ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া মব জাস্টিস ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের দাবি জানায় ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটা পাহাড় রোড় হয়ে মিছিলটি শহীদ মিনার চত্বর প্রদক্ষিণ করে জিরো পয়েন্টে এসে শেষ হয়। এ সময় জিরো পয়েন্ট মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চবি ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন। তিনি বলেন, আগস্ট মাসে হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার পতিত আত্মা দেশে এখনো বিরাজ করছে। যার ফলে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের গায়ে হাত তুলেছে। তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। এর আগে ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদের আইকন নৌকা প্রতীক ভাঙতে গেলে হাসিনা হলের ছাত্রীরা আমাদের ভাইদের বাধা দিয়েছে। আমরা চাই যারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। প্রশাসনকে একটা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
চবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে অপদস্ত ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এমন পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাশসন ব্যর্থ হলে আমরা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ফৌজদারি মামলা করব। আমরা তিনদিনের সময় দিলেও প্রশাসন এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা সাম্য, মৈত্রী, ফ্যাসিবাদমুক্ত ও বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে চাই। যারা ফ্যাসিবাদের মতো আচরণ করবে তাদের বিরুদ্ধে চবি ছাত্রদল সর্বদা সোচ্চার থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যেও এখনো অনেক ফ্যাসিবাদের দোসর ঘাপটি মেরে আছে। এদেরকে অবিলম্বে শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
চবি ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসীন বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে যাচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম ৫ আগস্ট গণবিপ্লবে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, কিন্তু ক্যাম্পাসগুলোতে তাদের দোসররা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ সকলে। কারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বোনদের বলতে চাই, আমরা আপনাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছি। আপনারা আমাদের মায়ের জাত, আপনাদেরকে আমরা সম্মান জানাই। বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা এমন কোনো আচরণ করবেন না, যার কারণে আপনাদের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের অবস্থান নিতে হয়। আপনারা ছাত্রলীগের নেত্রী ছিলেন, কিন্তু প্রশাসন আপনাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আমরা ছাত্র সংগঠনগুলো আপনাদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল আচরণ করেছি বলেই এখন পর্যন্ত আপনারা হলে থাকতে পারছেন, শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছেন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলতে চাই, যদি স্বৈরাচারের দোসরদের শাস্তির আওতায় না আনা হয় তবে ক্যাম্পাসে মব জাস্টিস বেড়ে যাবে, এতে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের রক্তের প্রতি বেইমানি করা হবে। আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এটা কখনোই হতে দেব না।
প্রসঙ্গত, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের নৌকা প্রতীক ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনায় একজন সহকারী প্রক্টরের গায়ে হাত তোলেন হলটির নারী শিক্ষার্থী আফসানা এনায়েত এমি। তিনি আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।