Homeদেশের গণমাধ্যমেগোপালগঞ্জে ৫২ বছরেও হয়নি চার মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার

গোপালগঞ্জে ৫২ বছরেও হয়নি চার মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার


গতকাল ছিল ১০ মার্চ। গোপালগঞ্জের চার বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস। এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার টুপুরিয়ায় কমিউনিস্ট নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউর রহমান লেবু, ন্যাপ নেতা কমলেশ বেদজ্ঞ, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা বিষ্ণুপদ কর্মকার ও রামপ্রসাদ চক্রবর্তী মানিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার দীর্ঘ ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও এই হত্যার বিচার এখনও পায়নি নিহতদের পরিবার।

দিনটি উপলক্ষে সোমবার দিনব্যাপী বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির গোপালগঞ্জ জেলা শাখা।

এদিন বেলা ১১টায় নিহতদের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও তাদের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামানের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির গোপালগঞ্জ জেলা শাখা। জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মুহম্মদ আবু হোসেনের নেতৃত্বে এদিন সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার আড়পাড়া গ্রামে ওয়ালিউর রহমান লেবুর সমাধিতে ও দুপুর ১২টায় সদর উপজেলার মানিকদাহ পৌর শ্মশানে বাকি তিন নেতার সমাধিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়।

পরে দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসকের হাতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন নেতৃবৃন্দ। এ সময় খুলনা জেলা কমিউনিস্ট কমিটির সভাপতি ডা. মনোজ দাস, সদস্য সুতপা বেদজ্ঞ, গোপালগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য মো. নাজমুল ইসলামসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে ন্যাপ (মোজাফফর) মনোনীত এবং সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থিত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া আসনের প্রার্থী ছিলেন কমলেশ বেদজ্ঞ। তার অনুগামী সহকর্মী ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা ওয়ালিউর রহমান লেবু, ছাত্র ইউনিয়নের গোপালগঞ্জ জেলার সহসভাপতি বিষ্ণুপদ কর্মকার ও ছাত্র ইউনিয়নের কোটালীপাড়া থানা কমিটির তৎকালীন প্রচার সম্পাদক রামপ্রসাদ চক্রবর্তী মানিক। নির্বাচন শেষে কোটালীপাড়া হতে ১০ মার্চ সকালে পায়ে হেঁটে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন তারা। পথিমধ্যে টুপুরিয়া গ্রামে পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হেমায়েত উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী এই চার নেতার ওপর হামলা চালিয়ে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে ‍ও কুপিয়ে হত্যা করে।

এই হত্যাকাণ্ডের পর ১০ মার্চ রাষ্ট্র বনাম হেমায়েতউদ্দিন গং নামে একটি মামলা নথিবদ্ধ হয়। মামলা নম্বর মামলা নম্বর-৫(৩)/১৯৭৩, জি আর নম্বর-৯৬/৭৩, স্পেশাল ট্রাইবুনাল নম্বর-১/৮৬ ধারা-ইউ/এস-৩০২/৩৬৪/৩২৫/১০৯/১১৪/১৪৮ বি.পি.সি, আইও- মি. এন রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার, গোপালগঞ্জ। মামলার বর্তমান বাদী কমলেশ বেদজ্ঞর মেয়ে সুতপা বেদজ্ঞ।

এই হত্যামামলাটি ৫২ বছর ধরে আসামিদের অপকৌশলে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নিম্ন ও উচ্চ আদালতে বারবার স্থগিতাদেশের মাধ্যমে বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে।

২০২২ সালে সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্ট আসামিদের মামলা স্থগিত আবেদন খারিজ করে দেন। ২০২৩ সালের ১২ জুলাই মামলার নথিপত্র গোপালগঞ্জ স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাঠানো হলেও এখনও সে আদেশ আদালতে পৌঁছেনি। সকল তথ্যপ্রমাণ থাকার পরেও তথ্যপ্রমাণের অভাবের অজুহাতে এবং আসামিরা ৫২ বছর ধরে সকল সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাবে এই মামলার বিচারকার্য শেষ করতে বাধা দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে দেয়নি।

অধ্যক্ষ মুহম্মদ আবু হোসেনের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বৈষম্যবিলোপের এক নতুন বাংলাদেশ বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি এবং নতুন এই প্রেক্ষাপটে আমাদের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, চারজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নৃশংস হত্যার বিচার শেষ করতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানাই।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত