খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা কালীবাড়ি বাজারে দত্ত জুয়েলার্স নামের স্বর্ণের দোকানে দিনদুপুরে বোমা ফাটিয়ে গুলি ছুড়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ডাকাতদের ব্যবহৃত গাড়ি ও গাড়ির চালককে আটক করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে কালিবাড়ি বাজারে অ্যাশ (ছাই) কালারের একটি প্রাইভেটকার দত্ত জুয়েলার্স দোকানের সামনে এসে থামে। আশপাশের সাধারণ পথচারীরা ভেবেছেন, কাস্টমার দোকানে ঢুকেছে। ২-১ মিনিট পরেই গাড়িটির পেছনে এবং সামনে থেকে হাত বোমা ছুড়তে থাকে। এতে এলাকায় থমথমে ও ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, দলে পাঁচ জন ডাকাত ছিল। তিন জন দোকানের মধ্যে ঢোকে ও একজন বাইরে বোমা ছুড়ছিল এবং আরেকজন প্রাইভেটকারে চালকের আসনে বসে ছিল। এলাকাবাসী তাদের ধরার চেষ্টা করলে তাদেরকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়তে থাকে। বোমার স্প্রিন্টারে রিকশা গ্যারেজের মালিক রাজা মিয়াসহ দুই জন আহত হন।
এ সময় এলাকাবাসী, গাড়ির গায়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে গাড়ির সামনের গ্লাস এবং সাইড গ্লাস ভেঙে দেয়। ডাকাতি শেষ করে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার ওপরে কাঠের টুল দিয়ে প্রাইভেটকারটি থামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গাড়িটি এত দ্রুত বেগে চালাচ্ছিল, এগুলো ভেঙে দ্রুতগতিতে গাড়ি চলে যায়। দৌলতপুর থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে তাদের ওয়ারলেসের মাধ্যমে গাড়িটি আটকানোর জন্য সব থানায় মেসেজ দেয়।
খানজাহান আলী থানা পুলিশের প্রচেষ্টায় ফুলতলার জামিরা বাজারের কাছে গাড়ি থামিয়ে ডাকাতরা নেমে পালিয়ে যায়। এ সময় ডাকাত দলের সদস্য গাড়িচালক নাজিম উদ্দীন (৪৫) ও ঢাকা মেট্রো-গ,১৯-৬৭৬৬ প্রাইভেটকার আটক করে।
ডাকাতির ঘটনার সংবাদ শুনে পুলিশের কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (উত্তর), সহকারী পুলিশ কমিশনার (দৌলতপুর জোন), দৌলতপুর থানার ওসি, পরিদর্শক (তদন্ত), সিআইডির তদন্ত টিম, পিবিআইসহ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
দত্ত জুয়েলার্সের মালিক উত্তম দত্ত বলেন, দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে দোকানের দরজা খুলে তিন জন লোক প্রবেশ করে। তাদের হাতে পিস্তল ও চাপাতি ছিল। আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে স্বর্ণালঙ্কারের বক্স চাপাতি দিয়ে ভেঙে স্বর্ণ অলঙ্কার ও ক্যাশে থাকা নগদ দুই লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পেছনে থাকা একজনকে আমি জড়িয়ে ধরলে আমাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। অল্পের জন্য গুলিটি আমার গায়ে লাগেনি। গুলির খোসা আমার দোকানের মধ্যেই পড়েছিল।
দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানান, দত্ত জুয়েলার্সের ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজন আসামি ও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি আটক করা হয়েছে। আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শংকর কর্মকার বলেন, আমরা জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা সর্বদা আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে ও লুট হওয়া নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানান।
প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা জোরদার করেন।
এলাকাবাসী বলেন, দিনেদুপুরে জনবহুল একটি এলাকায় এভাবে ডাকাতি আমরা কখনো আশা করিনি। এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় বড় একটি চক্র জড়িত না থাকলে এমনটা ঘটা সম্ভব নয়। এই ডাকাতির ঘটনার নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তাদেরকেও খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী।