উনিশ শতকের গোড়ার দিকে জে জিওঘেগান তাঁর সিল্ক ইন ইন্ডিয়া গ্রন্থে লিখেছেন, রেশম পোকা পালনের জন্য আলাদা ঘরের প্রয়োজন হতো। একটি ঘরে ২০০ কাহন বা ২ লাখ ৫৬ হাজার পোকা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পোকা পালনের এই মাচাকে ধরে রাখে বাঁশের খুঁটি আর তার তলায় থাকে পানিভর্তি একটা পাত্র, এভাবে পোকামাকড় প্রতিহত করা হয়।
যে মুহূর্তে পোকা রেশমের জন্য তৈরি হয়ে যেত, তাদের গায়ের রং ‘গ্রিনিশ’ ক্রিম থেকে লাইট অরেঞ্জ কালার হয়ে যেত। তাদের দেহ থেকে একধরনের রস নির্গত হতো। সেটিই হলো রেশম। রেশম বয়নের জন্য কৃষক বা কারিগর মাদুর, ছুরি, ঝুড়ি ইত্যাদি সংগ্রহ করেন। পাটের চটের ওপর পোকাগুলোকে রৌদ্রে মেলে ধরা হয়, পাশে রাখা হয় কলসিভরা পানি।
পোকাগুলোকে মাদুরে রেখে রোদে দেওয়া হয়। তারপর অল্প রোদে শুকিয়ে রাতে ঘরে তুলে নেওয়া হতো। পোকাগুলোর দেহ থেকে ৫৬ ঘণ্টা ধরে রেশম বেরিয়ে আসত। চার বা পাঁচ দিন পর পোকাগুলো রেশমের জন্য তৈরি হয়ে যায়। বর্ষাকালে এদের শুকাতে আরও বেশি সময় লেগে যেত। কৃষক এই পোকাগুলোকে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। না হলে এগুলো ফুটিয়ে রেশম সুতা কাটা হয়।
সুতা কাটুনি পোকা থেকে যে সুতা কাটেন, তার নাম পুতনি বা পত্তনি, মোটা ও সরু সুতা একসঙ্গে কাটা হয়।
এ ছাড়া বাংলায় রেশম পোকাই শুধু নয়, রেড়িগাছ বা ভেরেণ্ডাগাছের পাতা খায় যে অ্যান্ডি পোকা, সেগুলোও রেশমগুটি উৎপাদন করত। অ্যান্ডি পোকার চাষ ভারতে হলেও বাংলাদেশে হয় না। কেন হয় না, তুঁত বোর্ডের কর্মকর্তারা জানেন না। এ ছাড়া যেসব পোকা শালপাতা, আমপাতা, পাটপাতা খেয়ে গুটি বানায়, সেগুলো গৃহপালিত নয়।