সামাজিক সংকট হিসেবে বিভৎষরূপে প্রকাশ্যে আসতে থাকা ধর্ষণের ঘটনাগুলো নিয়ে যখন দেশজুড়ে তোলপাড়াড চলছে, তখন কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া তিনটি ঘটনা নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জেলাটিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুটি ধর্ষণ ও একটি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা সামনে এসেছে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান নিজেই এই তথ্য দিয়ে বলেছেন, এসব ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত তারা একজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছেন।
নাজির আহমেদ বলছেন, কুমিল্লায় গত শুক্র ও শনিবার দুইটি ধর্ষণ ও একটি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে।
ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা ‘এইড কুমিল্লা’ এর সভাপতি রোকেয়া বেগম শেফালী।
কুমিল্লা জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসে কুমিল্লায় প্রায় সাতটি ধর্ষণ এবং ইভটিজিংয়ের আরো কয়েকটি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ, বিচার না পাওয়ার সংস্কৃতি ও সামাজিক লজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগীদের অনেকেই অভিযোগই করেন না। থানায় অভিযোগ গ্রহণে গড়িমসির অভিযোগসহ নির্যাতনকারী পক্ষের হুমকি-ধমকিও ভুক্তভোগীদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার পথে বড় বাধা।
মাগুরায় আট বছরের শিশুর ওপর নির্মম যৌন নির্যাতনের ঘটনায় নড়ে গেছে পুরো দেশ। সেই আঁচ পড়েছে কুমিল্লায়। জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সোমবার (১০ মার্চ) নেমে আসে রাস্তায়। স্লোগান তোলে ধর্ষণের বিরুদ্ধে, ধর্ষকের বিচার দাবিতে আওয়াজ তোলে তারা।
নারী নির্যাতন রুখে দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীদের নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করার দাবিতে ‘কুমিল্লা’নামে শিক্ষার্থী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে।
শনিবার (৮ মার্চ) কুমিল্লা সদর দক্ষিণে এক নারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ওই নারীকে দীর্ঘদিন ধরে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। ধর্ষণ চেষ্টায় বাধা দেওয়ায় মারধরের শিক্ষার হন ভুক্তভোগীর স্বামী।
একই দিন লালমাই উপজেলার ভুশ্চি গ্রামে সাত বছরের এক শিশুকে কুকুর দিয়ে কামড়ানোর ভয় দেখিয়ে তিনবার ধর্ষণ করেছে আবাদ উল্লাহ নামে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ। গ্রামের মাতব্বররা ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করে। তবে, যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার করে এবং শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়।
এর আগের দিন, শুক্রবার (৭ মার্চ) লালমাই উপজেলায় বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে চিপস কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। নির্মাণাধীন ভবনের ওই কিশোরীকে নির্যাতন করা হয়। স্থানীয় এক নারী অভিযুক্তদের দেখে ফেললে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান। পুলিশ প্রধান অভিযুক্তকে আটক করলেও বাকিরা পলাতক।
কুমিল্লা জেলার নারী অধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা থাকলে অপরাধীরা এতটা সাহসী হয়ে উঠতে পারত না।
এইড কুমিল্লার সভাপতি রোকেয়া বেগম শেফালী বলেন, “অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছি। এক মাসের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ধর্ষণকারীদের। ধর্ষকদের বিচার নিয়ে তদন্ত করার কিছু নেই। তারা যে ধর্ষণ করেছে এটা তারা স্বীকার করেছে।”
“তাই তাদেরকে প্রকাশ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে।”
জেলা আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় রবিবার কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বলেন, নারী নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি লালমাইয়ে এক ধর্ষণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
“তবে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই নয়, আমাদের সাধারণ মানুষদেরকেও সচেতন হতে হবে। অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলে জেলার আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে,”বলেন নাজির আহমেদ।