Homeদেশের গণমাধ্যমেকক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল, হোটেল-মোটেলে কক্ষ ফাঁকা নেই

কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল, হোটেল-মোটেলে কক্ষ ফাঁকা নেই


ঈদের দ্বিতীয় দিন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে অন্তত এক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। মঙ্গলবার (০১ এপ্রিল) সকাল থেকে আসতে শুরু করেন পর্যটকরা। হোটেল কক্ষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই তারা নেমে পড়েন সমুদ্রসৈকতে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সৈকতজুড়ে পা ফেলার জায়গা ছিল না। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের কোথাও কোনও খালি কক্ষ নেই। সবগুলো আগাম বুকিং হয়ে গেছে।

কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটছেন এদিক-সেদিক, কেউ মোবাইলে ছবি তোলায় ব্যস্ত। কেউ আবার দ্রুতগতির নৌযান ‘জেডস্কি’ নিয়ে ঘুরে আসছেন সমুদ্রের বিশাল জলরাশি থেকে। অনেকে আবার বালুচরে সারিবদ্ধভাবে সাজানো কিটকটে (ছাতাযুক্ত চেয়ার) আয়েশি ঢংয়ে বসে এসব দৃশ্য উপভোগ করছেন।

কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের মেলা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় জড়ো হয়েছেন ৭০ থেকে ৮০ হাজার মানুষ। প্রচণ্ড গরমের এই দুপুরে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ সমুদ্রে নেমে গোসলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সৈকত ভ্রমণে আসা বেশিরভাগ মানুষের প্রধান আকর্ষণ হলো সমুদ্রের নোনা জলে নেমে কিছুক্ষণ শরীর ভেজানো। শীতের ঠান্ডা হাওয়া উপেক্ষা করে সকাল থেকেই লাখো পর্যটক পানিতে নেমেছেন। সমুদ্রের নীল জলরাশি উপভোগ করে তারা ছুটছেন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের দিকে। অনেকে আশপাশের বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরেছেন।

সমুদ্রসৈকত ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর পর্যটন পল্লি, হিমছড়ির ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী-পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, ঐতিহাসিক প্রেমের নিদর্শন মাথিন কূপ, নেচার পার্ক, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধ পল্লিসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলো এখন জমজমাট।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি সেফ লাইফ গার্ডের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমদ জানান, পর্যটকরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সমুদ্রে নেমে গোসল করেছেন। তাদের সামাল দিতে লাইফগার্ড কর্মীদের হিমশিম খেতে হয়।

হোটেল মালিকরা বলছেন, রমজান মাসজুড়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছিল নিস্তব্ধ। পর্যটকশূন্যতার কারণে হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টগুলোর কক্ষভাড়া ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। বন্ধ ছিল পর্যটননির্ভর রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য ব্যবসা। তবে সেই নীরবতা ভেঙে গেছে ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিনে। ঈদের প্রথমদিন সোমবার দুপুর থেকেই স্থানীয় পর্যটকদের আসা শুরু হয় সৈকতে। মঙ্গলবার থেকে অন্যান্য জেলা থেকেও পর্যটকদের আগমন বেড়ে যায়। এদিন সৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম হয়। ইতিমধ্যে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ দিনে সাত লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন তারা। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল রিসোর্ট, গেস্ট হাউসের ৯০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটক টানতে রোজার মাসে হোটেলকক্ষ ভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ছাড়ের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তা আজ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন শতভাগ কক্ষ ভাড়া দিয়ে হোটেলে থাকতে হবে।

হোটেল-মোটেল মালিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রমজানের আগে চার মাসে প্রতি সপ্তাহে গড়ে আড়াই থেকে তিন লাখ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছিলেন। গত বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে প্রায় ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছিল। এবারও দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনলাইনে ও ফোনে হোটেল কক্ষ বুকিং দেওয়া হয়েছে। ২ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। তারকামানের হোটেলগুলোতে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বুকিং আছে। শহর ও মেরিন ড্রাইভ এলাকায় ৫০০-এর বেশি হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের কোথাও কোনও খালি কক্ষ নেই

ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড কর্মীরা জানান, ঈদের প্রথম দিন সোমবার সৈকতে নেমেছিলেন মাত্র তিন হাজার পর্যটক। ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লাখো পর্যটক সৈকতে নেমেছেন। 

কক্সবাজার কলাতলী হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‌‘আজ দুপুর ১২টা থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে ৬০ হাজারের বেশি পর্যটক উঠেছেন। সন্ধ্যা নাগাদ আরও কয়েক হাজার আসবেন। বুধবার থেকে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-রিসোর্টে থাকার জায়গা হবে না। আজ মাঝারি আকারের কিছু হোটেলে ১০ থেকে ১২ শতাংশ কক্ষ খালি থাকলেও তারকা মানের হোটেল-রিসোর্টের কোনও কক্ষ খালি নেই। আগে কক্ষ বুকিং না দিলে পর্যটকের চাপের কারণে বিপাকে পড়তে হয়।’

শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-গেস্ট হাউস-রিসোর্টের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার উল্লেখ করে মুকিম খান বলেন, ‘রোজার পুরো মাস হোটেল মালিকদের ব্যবসা খারাপ গেছে। এ কারণে ঈদ পরবর্তী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ছাড়ের সুযোগ নেই। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে পর্যটকদের জন্য সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ কক্ষভাড়া ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছেন কতিপয় হোটেল মালিক। পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে কোনও হোটেল মালিক যেন নির্ধারিত মূল্যের বেশি কক্ষভাড়া আদায় করতে না পারেন, সে বিষয়ে নজরদারি রাখা হচ্ছে।’

পর্যটন উদ্যোক্তা রেজাউল করিম রেজা বাংল ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি এবারের ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটক আসবেন। সেজন্য পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত আছে। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবার বিষয়েও আমরা সতর্ক আছি।’

রমজান মাসে বন্ধ থাকা রেস্তোরাঁগুলো নতুন করে চালু হচ্ছে। কলাতলীর একটি রেস্তোরাঁর পরিচালক মাহমুদুল হক বলেন, ‘রমজানে ব্যবসা বন্ধ থাকায় স্টাফদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। পর্যটন জোনের অন্তত ৭০০ রেস্তোরাঁ রমজানে বন্ধ ছিল। ঈদ শেষে মঙ্গলবার থেকে সবাই কাজে যোগ দিয়েছেন।’

লাবণী পয়েন্টের জেলা পরিষদ মার্কেট ও আশপাশের বালিয়াড়িতে শামুক-ঝিনুক, শুঁটকিসহ অন্যান্য পণ্যের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও বেচাকেনা শুরু করেছেন। শামুক-ঝিনুক ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, রমজানে দোকান বন্ধ থাকায় ব্যবসা ভালো চলেনি। তবে এবার পর্যটকদের ঢল নামবে বলে আশা করছেন তিনি।

কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটছেন এদিক-সেদিক, কেউ মোবাইলে ছবি তোলায় ব্যস্ত

সৈকতে চেয়ার-ছাতা ব্যবসায়ী, ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকের পরিচালকদের পাশাপাশি ঘোড়ার মালিকরাও মঙ্গলবার ব্যস্ত সময় পার করেছেন। ঘোড়া মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদা আক্তার বলেন, ‘পুরো রমজানে পর্যটকের আনাগোনা ছিল না বললেই চলে। তবে ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে।’

পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমনটি জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পর্যটনকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক টহল ব্যবস্থা আছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সক্রিয় রয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া এবং রেস্তোরাঁগুলোয় খাবারের দাম যেন বেশি আদায় করা না হয়, সেসব তদারকির জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে। পর্যটকদের নির্বিঘ্ন সেবা দিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সভা করা হয়েছে। অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত