সৈকত জুড়ে পর্যটক আর পর্যটক। যেন কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের সরকারি ছুটিতে ২ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে।
বিশেষ করে, দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, সঙ্গে যোগ হয়েছে থার্টিফাষ্ট নাইট। কদিন পরেই ২০২৪ সালের বিদায়ের সুর বেজে উঠবে। সেই সঙ্গে বিরাজ করছে শীতের মায়াময় আমেজ।
এমন সুন্দর মুহূর্তে মনকে আনন্দে আন্দোলিত করতে ‘পর্যটন রাজধানী’ কক্সবাজারে বেড়াতে আসতে লাইন পড়েছে পর্যটকদের। মূলত: শুক্রবার থেকে সাপ্তাহিক ছুটি ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসকে উপলক্ষ করে বর্তমানে পর্যটকের ঢল নেমেছে এই সমুদ্র সৈকতে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আজ (সোমবার) কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন অন্তত দুই লাখ পর্যটক। বেড়াতে আসা এসব পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সমুদ্র সৈকত, সেন্টমার্টিন, ইনানী পাথুরে বীচ ও মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার থেকে হোটেল–মোটেল ও কটেজের ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং রয়েছে। ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বরের জন্য তা শতভাগ অগ্রিম বুকিং হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকরা বেড়াতে এসেছেন কক্সবাজারে। আগত পর্যটকদের বেশিরভাগ কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। পরিবার–পরিজন এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বেড়াতে আসা পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতে গোসল এবং ঘোড়া, বীচবাইক, জেটস্কি চড়ে আনন্দ আর হৈ–হুল্লোড় করছেন। পর্যটকের পদচারণায় পুরো সমুদ্র সৈকত কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে। পর্যটন জোন কলাতলীতেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
কলাতলী–মেরিন ড্রাইভ হোটেল–রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি মুকিম খান বলেন, ‘পর্যটন মৌসুম বহু আগে শুরু হলেও সেন্টমার্টিন পর্যটক গমন নিষেধ থাকায় এতদিন পর্যটন ব্যবসা জমেনি। ডিসেম্বরের শুরুতে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু হলে চাঙ্গা হয়ে উঠে পর্যটন শিল্প। এর ফলে বেড়েছে পর্যটক। বর্তমানে সব ধরনের হোটেলে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষ বুকিং রয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্তও ইতিমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে।’
কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘বহু চাহিদা থাকলেও সেন্টমার্টিনে যাচ্ছেন দৈনিক দুই হাজার পর্যটক। এ কারণে আগ্রহ থাকলেও অনেক পর্যটক এবছর কক্সবাজারে আসছেন না। তবে ভারতে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ বন্ধ থাকায় সেই শূন্যতা অনেকটা পূরণ হয়েছে। ভারত যেতে না পেরে অনেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসছেন।’
এদিকে বর্তমানে কক্সবাজার আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর নিরাপত্তা জোর রাখা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা ও থানা পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয় রাখা হয়েছে।
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক ফারিয়া রশীদ বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছি। রুম বুকিং না দিয়ে এখানে এসে বিপদে পড়েছি। কোনও রুম পাচ্ছি না। কটেজে কিছু রুম খালি আছে এগুলো মানসম্মত নয় এবং দামও বেশি।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক পারভেজ চৌধুরী বলেন, সন্তানদের পরীক্ষা শেষ। তাই তাদের সময় দিতে পরিবার নিয়ে এসেছি। সমুদ্র পাড়ে এসে এক সঙ্গে এত মানুষ দেখে ভালো লাগছে।
আজ (সোমবার) সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট ও লাবনী পয়েন্টে পর্যটককে ভরা। শুধু এই তিন পয়েন্ট ছাড়া অন্য পয়েন্টগুলোতে চোখে পড়ার মত ভিড় ছিল। আগত পর্যটকরা বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে ঘোড়ায় চড়ে, ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকে চড়ে সমুদ্র দর্শনে মেতেছেন। কিছু পর্যটক নোনা জলে স্নান করতে নেমে আনন্দ উপভোগ করছেন।
কক্সবাজার পর্যটক সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসাইন বলেন, লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত কক্সবাজার। আগত পর্যটকদের সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। কোনও পর্যটক হয়রানি অভিযোগ করলে— আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের টহল আরও দুইগুণ বাড়ানো হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলা পুলিশও কাজ করছে বলে জানান সুপার মো. রহমত উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও র্যাবসহ সব আইন–শৃঙ্খলাবাহিনী সমন্বিতভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে রাতদিন গোয়েন্দা নজরদারিও রাখা হয়েছে।’