মার্কিন সরকার ইসরায়েলের ইরান আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে গোপন নথি ফাঁস হওয়ার ঘটনায় তদন্ত করছে। মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার মাইক জনসন রবিবার সিএনএনের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন প্রোগ্রামে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই ফাঁস হওয়া তথ্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সেখানে কিছু গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং আমি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ নিয়ে একটি ব্রিফিং পেতে যাচ্ছি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছিলেন যে, নথি ফাঁসের ঘটনা তদন্তাধীন। আরেক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ওই নথিগুলো সত্য বলে মনে হচ্ছে। এই নথিগুলো মার্কিন জিওস্পেশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির। এতে দেখা গেছে, ইসরায়েল এখনও সামরিক সরঞ্জাম স্থানান্তর করে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যা ১ অক্টোবর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ হিসেবে করা হচ্ছে। নথিগুলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিনিময়ের জন্য তৈরি হয়েছিল।
নথিগুলো প্রথমে শুক্রবার টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে পোস্ট করা হয় এবং এরপর সিএনএন ও অ্যাক্সিওস এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কর্মকর্তারা তাদের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এ নিয়ে কথা বলেছেন। কারণ তারা জনসমক্ষে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য অনুমোদিত ছিলেন না।
তদন্তে এই নথিগুলো কীভাবে ফাঁস হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি কোনও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যের ইচ্ছাকৃত ফাঁস, নাকি সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়েছে, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও কোনও গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে কি না, তা-ও যাচাই করা হচ্ছে। এক কর্মকর্তা জানান, পোস্টের আগে নথিগুলোতে কারা প্রবেশাধিকার পেয়েছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।
মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলকে হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের হত্যার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে, উত্তরে লেবাননে সামরিক অভিযান আরও বিস্তৃত না করার জন্যও সতর্ক করা হয়েছে। যাতে বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকি এড়ানো যায়। তবে ইসরায়েলি নেতৃত্ব বারবার ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে তারা বসে থাকবে না।
এ বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা নথি ফাঁসের খবর সম্পর্কে অবগত। তবে এ নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি তারা। কংগ্রেস স্পিকার মাইক জনসন জানান, তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন। নেতানিয়াহুকে ‘বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাকে উৎসাহিত করার জন্য আমি নিজে উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়াও, এ বিষয়ে একটি গোপনীয় ব্রিফিং হবে বলে জানান তিনি।
টেলিগ্রামের একটি চ্যানেলে নথিগুলো পোস্ট করে দাবি করা হয়, এগুলো একজন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মী দ্বারা ফাঁস হয়েছে। ফাঁসের সঙ্গে জড়িত টেলিগ্রাম চ্যানেলটি তেহরানে অবস্থিত বলে দাবি করা হয়েছে। এই ফাঁস হওয়া নথিগুলোর বৈধতা ও এর পরিণতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ এর ফলে ইসরায়েল-ইরান সম্পর্কের অস্থিতিশীলতা আরও তীব্র হতে পারে।