অজস্র ঋণ করে এভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর কৌশল পুরো জাতিকে বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সাগরে নিমজ্জিত করেছে। আর তা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়েছে এ জন্য যে ওই ঋণের সিংহভাগই স্রেফ পুঁজি লুণ্ঠনের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। হাসিনা আমলের ‘এক নম্বর সমস্যা’ পরিণত হয়েছিল পুঁজি পাচার। নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি দাবি করেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে ১৪৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।
হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়েছে। দেশকে লুটেপুটে ছারখার করে দিয়ে সিংহভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এই পুঁজি লুণ্ঠনের কেন্দ্রে শেখ পরিবারসংশ্লিষ্ট অনেকের বিরুদ্ধেই জোর অভিযোগ আছে। সঙ্গে আছে লুটেরা অলিগার্ক ব্যবসায়ী এবং হাজার হাজার লুটেরা রাজনীতিবিদ ও দুর্নীতিবাজ আমলা।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ অভিযোগ করেছেন, ২০০৯ সালেই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বিএনপি অনেক টাকা কামিয়েছে। এখন আমাদের দুহাতে টাকা বানাতে হবে।’
এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পুঁজি লুণ্ঠন অনেকখানি কমে গেছে। তাই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যয় এবং সরকারি ব্যয় চলতি অর্থবছরে অনেকখানি কমে যাবে। তাই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারও কমে যাবে। একই সঙ্গে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে আন্দোলন, গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা, তৈরি পোশাকশিল্পের উৎপাদন–সংকট ইত্যাদি মিলিয়ে সামগ্রিক উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটেছে। এর নেতিবাচক প্রভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৪ বা ৪ দশমিক ৫-এ নেমে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।