বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক যোগাযোগ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের অতিরঞ্জিত প্রচারের মধ্যে সেদেশে খবর রটেছে ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) কর্মকর্তারা ঢাকা সফরে রয়েছেন।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত এই খবরকে গুজব বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ফ্যাক্টস বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিবৃতি দিয়েছে, যা তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়।
বাসসের খবর অনুযায়ী, ওই বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য রয়েছে, যিনি সাফ এ-সম্পর্কিত খবরকে সর্ববৈ মিথ্যা বলে বর্ণনা করেছেন।
তারপরও আইএসআই কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফরের গুজবকে গুরুত্বে নিয়ে পাত্তা দিচ্ছে নয়াদিল্লি, যা নিয়ে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ভারতের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, এ দিন পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ আইএসআই কর্মকর্তাদের ঢাকা সফরের খবরের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে নয়াদিল্লি।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জইসওয়াল নয়াদিল্লিতে শুক্রবার নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আসেন। তখন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত প্রতিবেশীদের (বাংলাদে-পাকিস্তান) সম্পর্কোন্নয়নের ওপর গভীর নজর রাখছে এবং প্রয়োজন অনুসারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।
আইএসআইর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শহীদ আমির আফসারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন- এমন খবর দ্য ইকোনমিক টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে থেকে শুরু করে ভারতের প্রথম সারির প্রায় সংবাদমাধ্যম এসেছে।
এই খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদ সম্মেলনে রণধীর জইসওয়ালের কাছে ভারতের প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা। তখন তিনি বলেন, “আমরা সারা দেশে এবং এই অঞ্চলের সমস্ত কার্যকলাপের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে, এমন সব কার্যক্রমের ওপর নজর রাখি এবং সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।”
অবশ্য বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক জোরদারের ওপরও গুরুত্ব দেন জইসওয়াল। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং বিদ্যমান সম্পর্ক আরো মজবুত করে গড়ে তোলা। আমরা একটি গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশকে সমর্থন করি। আমরা আমাদের সম্পর্ক জোরদার করতে চাই, যাতে ভারত ও বাংলাদেশের জনগণ উন্নতি করতে পারে।”
সীমান্তের বেড়াবিহীন অংশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে ভারতের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের আপত্তির বিষয়ে এক প্রশ্নে জইসওয়াল বলেন, “এই ধরনের নির্মাণকাজ বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় রয়েছে।”
আইএসআই কর্মকর্তাদের ঢাকা সফরের খবর সরকার থেকে নাকচ করলেও বাংলাদেশের সামরিক কর্মকর্তাদের পাকিস্তান সফরের তথ্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গণমাধ্যমকে জানায় আইএসপিআর।
গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাকিস্তান সফর শেষে দেশে ফিরেছে ৬ সদস্যের সামরিক প্রতিনিধি দল। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি ১৩ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তান সফর করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সফরকালে প্রতিনিধিদলটি পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রধানসহ উচ্চপর্যায়ের সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করে।
সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধিরা দুই দেশের মধ্যকার সামরিক বাহিনীর পেশাগত ও প্রশিক্ষণসংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।