ময়মনসিংহের ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার এক কিশোরীর (১৬) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে নান্দাইল উপজেলায় নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়।
ওই কিশোরী মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ আহমেদ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই কিশোরীর সঙ্গে একই এলাকার হানিফ মিয়ার ছেলে হোসাইনের (২২) সম্পর্ক গড়ে তোলে। সম্পর্কের জেরে পরিবারকে না জানিয়ে মেয়েটিকে গত ১ জুন অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় হোসাইন। তিন মাসেরও বেশি সময় সেখানে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে। নির্যাতনে মেয়েটির একটি চোখ আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ির সামনে সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায় হোসাইন।
পরে পরিবারের লোকজন মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে ময়মনসিংহ ও পরে ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে গত ১৫ দিন চিকিৎসার সময় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁ চোখ বাঁচাতে ডান চোখটি তুলে ফেলেন চিকিৎসক। কিন্তু অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করিয়ে পরিবার বাড়িতে নিয়ে আসে। চিকিৎসক তাদের সঙ্গে দিয়ে দেন চোখের কর্নিয়া। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে কর্নিয়া নিরাপদ ও সতেজ থাকার জন্য বাড়ির ফ্রিজে রাখা হয়। ডাক্তারের পরামর্শে পরিবার অপেক্ষায় ছিল, মেয়েটি সুস্থ হলে আহত চোখে কর্নিয়া স্থাপন করা যাবে। কিন্তু তার আগেই সোমবার দুপুরে মেয়েটি নিজ বাড়িতে মারা যায়।
মৃত্যুর খবর পেয়ে নান্দাইল থানার ওসি ফরিদ আহমেদ মেয়েটির বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এদিকে, এর আগে অপহরণের ঘটনায় আদালতে মামলা করলে আদালত সেটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ময়মনসিংহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন পরিদর্শক মোসলেহ উদ্দিন। গত কয়েকদিন ধরেই তিনি তদন্ত করছিলেন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পিবিআই পুলিশ সুপার মো. রকিবুল আক্তার বলেন, ‘আনুমানিক মাসখানেক আগে মেয়েটির পরিবার আদালতে অপহরণ মামলা করে। মামলাটি পরিদর্শক মোসলেহ উদ্দিন তদন্ত করছিলেন। শুনেছি, মেয়েটি মারা গেছে। এখন আমরা আমাদের মতো করে আইনি প্রক্রিয়া চালাবো।’
মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমি আদালতে মামলা করেছি বিচার চেয়ে। এখন তদন্ত চলছে। আসামির এমন শাস্তি দেখতে চাই যাতে আর কোনও মেয়ের জীবনে এরকম ঘটনা না ঘটে।’