Homeজাতীয়১৫ বছরে পুলিশে অপরাধের শাস্তি পৌনে তিন লাখ

১৫ বছরে পুলিশে অপরাধের শাস্তি পৌনে তিন লাখ


পেশাদার বাহিনীর সদস্য হয়েও অপেশাদার কাজে জড়িয়ে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা প্রায় পৌনে তিন লাখ সাজা পেয়েছেন। সাজা পাওয়া পুলিশ সদস্যের সংখ্যা দুই লাখের কিছু বেশি। তাঁদের কেউ লঘুদণ্ড, কেউ পেয়েছেন গুরুদণ্ড। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে, আচরণগত পরিবর্তনের জন্য শাস্তি দিয়ে পুলিশের এত সদস্যের মধ্যে শুধু ক্ষোভ সৃষ্টি করা হয়েছে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত শনিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ পুলিশের অভিযুক্ত সদস্যদের পদমর্যাদা ও অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী কখনো পুলিশ সদর দপ্তর, আবার কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ড দিয়েছে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষুব্ধ সদস্য নিয়ে বাহিনী পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। কমিশন মনে করে, অপরাধ করলে শাস্তি দেওয়া দরকার। কিন্তু বেশি প্রয়োজন সৎ, দক্ষ ও সুশৃঙ্খল বাহিনী গঠনে প্রয়োজনীয় নৈতিকতা, সদাচরণ, মানবিকতা, মানবাধিকারবিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম নেওয়া, যা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জন্য করা হয় না। তবে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ এলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অভিযোগ তদন্তে স্বচ্ছতা, আন্তরিকতা এবং বিশ্বাসের একটি পরিবেশ তৈরির জন্য অভিযোগকারীর পক্ষে একজনকে তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দিয়েছে কমিশন।

বিভিন্ন সময়ে পুলিশের বিভিন্ন পদের সদস্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ঘুষ, মানুষের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। মামলা হয়েছে। সদস্যদের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে পুলিশ বাহিনীও বিব্রত। পুলিশের এমন সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ১৯৭৭ সালের ৩০ আগস্ট সিকিউরিটি সেল গঠন করা হয়। পরে ২০১২ সালে এটি ভেঙে ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রোফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড নামকরণ করা হয়।

২০২৪ সালের ৭ মে কাজের সুবিধার্থে ডিঅ্যান্ডপিএস ১ ও ২ শাখায় ভাগ করা হয়। যার দায়িত্বে থাকেন একজন ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক) ও একজন এআইজি (সহকারী মহাপরিদর্শক)। পুলিশ সদর দপ্তরের এই শাখা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ গবেষক ড. তৌহিদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, কমিশনের এই সুপারিশের বিষয়ে তিনি শতভাগ একমত নন। তিনি মনে করেন, শুধু প্রশিক্ষণে পুলিশের আচরণগত ও মনোভাবগত পরিবর্তন আনা কঠিন। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, প্রথম পুলিশ সদস্যদের অভিযোগের তদন্তের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা দরকার। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুলিশ তদন্ত করে, পুলিশ সাজা দেয়—এটা কোনো প্রক্রিয়া হতে পারে না। সাজা যথাযথ নিশ্চিত করে পরবর্তী ধাপে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে তা কাজে আসতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান সদস্যসংখ্যা ২ লাখ ১২ হাজার। বিভিন্ন অভিযোগে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৬৮ হাজার ৭২১টি ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৫ হাজার ১৭১টি লঘুদণ্ড ও ২৩ হাজার ৫৫০টি গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কখনো একটি অপরাধে একাধিক সদস্য শাস্তি পেয়েছেন। আবার কখনো একজন পুলিশ সদস্য একাধিক অপরাধে শাস্তি পেয়েছেন। ২০২০ সালে ২২ হাজার ৬২৩টি অপরাধে, ২০২১ সালে ২২ হাজার ১৮৬ টি, ২০২২ সালে ২৬ হাজার ১০৫ টি, ২০২৩ সালে ২৪ হাজার ৫৩৪টি অপরাধে পুলিশ সদস্যদের সাজা দেওয়া হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, বিভাগীয় মামলায় গেজেটেড অফিসারের ক্ষেত্রে চাকরি থেকে অপসারণ বা পদাবনতির মতো গুরুদণ্ডের চূড়ান্ত আদেশ দেওয়ার আগে পিএসসির পরামর্শ নেওয়া হয়। চূড়ান্ত আদেশের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট সময়ে আপিল করতে পারেন। আবার বিভাগীয় মামলায় পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দিতে প্রয়োগ করা বিধিবিধানে উল্লিখিত দণ্ডের ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্যও থাকে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী পরিদর্শক থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তার ক্ষেত্রে ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা একটি লঘুদণ্ড। কিন্তু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (অধস্তন কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদমর্যাদার সদস্যদের ক্ষেত্রে ইনক্রিমেন্ট স্থগিতকরণ একটি গুরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, অপরাধ করে পুলিশের কোনো সদস্য পার পায়নি, আর পাবেও না। অপরাধ অনুযায়ী তদন্তের পর যথাযথ বিচার হবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত