Homeজাতীয়হত্যাকারীদের বিচার এ দেশের মাটিতেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা

হত্যাকারীদের বিচার এ দেশের মাটিতেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা


প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আপনাদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই—যারা গণহত্যায় জড়িত ছিল, যারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, যারা ইতোমধ্যে হত্যাকারী হিসেবে বিশ্বের কাছে স্বীকৃত, তাদের বিচার এ দেশের মাটিতে হবেই।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জাতিসংঘের রিপোর্ট পড়ে সবার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। কী ভয়াবহতা! কীভাবে একজন প্রধানমন্ত্রী নিজ দেশের নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার পর লাশ লুকিয়ে ফেলার নির্দেশ দিতে পারে! ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য তিনি পৃথিবীর সব নিষ্ঠুরতা ছাড়িয়ে গেছেন—এটাই জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের এই রিপোর্টকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিবেদনে যে সুপারিশ করা হয়েছে— অন্তর্বর্তী সরকার সে সুপারিশগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।

তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচারের নিপীড়নের বর্ণনা উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের রিপোর্টে। গত জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, এর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তারা। এই রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে শেখ হাসিনা নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে। বিগত সরকার, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী গোষ্ঠী ও সংগঠন একত্রিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু। বিক্ষোভের সম্মুখ সারিতে থাকার কারণে, আমাদের জুলাই-কন্যারা নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে আমি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গিয়েছি। ক্যাম্পে অবস্থানরত ১ লাখ রোহিঙ্গা শিশু, কিশোর, নারী, পুরুষ সবার সঙ্গে ইফতার করেছি। আমাদের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি পৃথক অধিবেশ আয়োজন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মালয়েশিয়া ও ফিনল্যান্ড যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজক হতে এগিয়ে এসেছে। এর পাশাপাশি, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী জুলি বিশপকে এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় মুখ্য ভূমিকা পালনের জন্য আমি আহ্বান জানিয়েছি। তিনি আমার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ সফরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য, রাজনৈতিক দলের নেতা ও তরুণদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সবাই জাতিসংঘের মহাসচিবকে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন।

ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ৬টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনসহ ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো খুবই ইতিবাচকভাবে সংস্কার কাজে সাড়া দিয়েছে, তাদের মতামত তুলে ধরছে। কোন রাজনৈতিক দল কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে একমত হয়েছে, কোনটিতে দ্বিমত হয়েছে—সেসব তারা জানাচ্ছেন। এটা আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত সুখকর বিষয় যে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে মত দিচ্ছেন। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়ার কাজ এখন চলমান আছে। কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে, সেগুলো চিহ্নিত করা এবং তার একটা তালিকা প্রস্তুত করা। যেসব দল এতে একমত হয়েছে তাদের সই নেওয়া। এই তালিকাটিই হবে জুলাই চার্টার বা জুলাই সনদ।

তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব জাতির সামনে পুরো প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা এবং প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচনের ব্যাপারে আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমরা চাই, আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। এজন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনায় নির্বাচনের জন্য তৈরি হতে শুরু করবে বলে আশা করছি।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত