Homeজাতীয়সংবিধান বাতিল চায় ছাত্ররা

সংবিধান বাতিল চায় ছাত্ররা


’৭২ সালের সংবিধানের সংস্কার অথবা বাতিলের দাবি এবার জোরেশোরে তুলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের নেতারা বলেছেন, ঘোষণাপত্রে মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে।

প্রকাশের আগে ঘোষণাপত্রের খসড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠনসহ সব অংশীজনের কাছে পাঠিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই খসড়ায় সংবিধানের সংস্কার অথবা বাতিলের কথা বলা হয়েছে। অবশ্য দলগুলোর মতামতের প্রেক্ষাপটে ঘোষণাপত্রের কোনো কোনো বিষয় পরিবর্তনও হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ছাত্রনেতাদের সংবাদ সম্মেলন
ঘোষণাপত্র প্রকাশকে সামনে রেখে রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে গতকাল রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে মুজিববাদী ’৭২-এর সংবিধানের কবর রচনার কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গত ৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র না হওয়ার কারণে বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে ফ্যাসিস্টরা। এটি গণ-অভ্যুত্থানের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। গণ-অভ্যুত্থানকে ঘিরে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে এবং ’৭২-এর সংবিধান মানুষ যে প্রত্যাখ্যান করেছে, তার একটি দালিলিক প্রমাণ হিসেবে ৩১ ডিসেম্বর জাতির সামনে মুজিববাদী ’৭২-এর সংবিধানের কবর রচিত হবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে ৩১ ডিসেম্বর সবাই শহীদ মিনারে জড়ো হবে।

বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আরও আগেই দেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে জানান সারজিস আলম। তবে বিভিন্ন সেক্টর থেকে সহযোগিতা না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের একটি দলিল হয়ে থাকবে। নতুন যাঁরা দেশ পরিচালনায় আসবেন তাঁদের জন্য এ ঘোষণাপত্র একটি নির্দেশক হিসেবে থাকবে। এটি বাংলাদেশের সব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।

আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘নাৎসিবাদী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে ঘোষণাপত্রের খসড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে পাঠানো হয়েছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে।

শহীদ পরিবারের লোকজন ছাড়াও সব রাজনৈতিক দল ও গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে জড়ো হবেন।

ঘোষণাপত্রের খসড়ায় যা আছে
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এ ঘোষণাপত্রের সব আয়োজন করা হচ্ছে। এতে সহযোগিতা করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। নাগরিক কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ঘোষণাপত্রে নতুন বাংলাদেশের জন-আকাঙ্ক্ষার কথা উঠে আসবে।

বিভিন্ন পক্ষের কাছে পাঠানো খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতে ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে দেশে মানুষের শোষণ-শাসন ও নির্যাতন-নিপীড়নের কথা তুলে ধরা হয়েছে। মহান স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া লাখো মানুষের স্বপ্নকে চূর্ণ করেছে ১৯৭১-এর সংবিধান। একই সঙ্গে এ সংবিধান গণতন্ত্র ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতার পথ সুগম করেছে।

সামরিক শাসন ও রাজনৈতিক স্বার্থে সেই সংবিধানকেও সংশোধন করে রাষ্ট্রকে দুর্বল করা হয়েছে এবং এতে প্রতিষ্ঠানগুলো বিপন্ন হয়েছে বলে ঘোষণাপত্রের খসড়ায় বলা হয়েছে। এরপর রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ১/১১-এর প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, সরকারি কর্মকর্তারা শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমন্বয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন; তিনটি অবৈধ নির্বাচন করেছে, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে; ক্যাম্পাসে ছাত্রদের নির্যাতন করেছে এবং সরকারি চাকরি আওয়ামী লীগের নিজস্ব সম্পত্তিতে পরিণত করেছে।

এসব প্রেক্ষাপটসহ সর্বশেষ শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের উল্লেখ করে ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘তাই আমরা (ছাত্র-জনতা) বাংলাদেশের ছাত্র ও সাধারণ মানুষ মর্যাদা, সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

ঘোষণাপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ বলেন, ‘ঘোষণাপত্রে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে। জনগণ যেন ঘোষণাপত্রকে গ্রহণ করে, সেটার জন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। মূলত এটি একটি স্পষ্ট দলিল।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত