এক মাস পর ভ্যাট বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাজেটের মাধ্যমে ভ্যাট না বাড়িয়ে বছরের শুরুতে বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা গুরুতর আহত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে ৩৫ লাখ টাকা করে কয়েকশ কোটি টাকা দিতে হয়েছে। পুলিশের ৩০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, সেখানে ৫০০ কোটি টাকা দিতে হবে। এই টাকা আমি কোথা থেকে পাবো। টাকার জোগান দিতেই ভ্যাট বাড়িয়েছি।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএসআরএফ’র সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক মতবিনিময় সভার সঞ্চালনা করেন। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা ক্ষুরের ওপর দিয়ে হাঁটছি। চেষ্টা করছি, বলবো না যে, আমরা খুব ভালো করছি। অন্য দেশগুলোর তুলনায় আমরা খারাপ নেই। আমরা মোটামুটি ভালো আছি।
বছরের শুরুতে ভ্যাট বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাকে অনেক টাকা দিতে হয়েছে। এ টাকা আমি কোথা থেকে দেবো। তাই ভ্যাট বাড়িয়েছি। তারপর অনেকগুলোতে কমিয়েও দিয়েছি। চেষ্টা করবো বাজেটে ভ্যাটের ওপর নির্ভরতা কমাতে।
আমার রিসোর্স গ্যাপ অনেক বেশি জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এজন্য আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবির সহায়তা নিতে হয়েছে। আমাদের ঋণ শোধ করতে হয়, কোনোদিন ডিফোলডার হয়নি বাংলাদেশ। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা আমাদের সাহায্য করছে।
তিনি বলেন, জনগণের এখতিয়ার মানে রাজনৈতিক সাপোর্ট, আমরা কিন্তু ক্ষমতায় আসিনি, আমাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আমরা যেটা করছি কিছু কিছু কারণ আছে, সবকিছু ভেবেচিন্তে করছি। এখানে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা আছে, রাজনৈতিক ব্যাপার আছে। তাহলে কীভাবে আমরা রাজস্ব ব্যয় কমাবো। এক্ষেত্রে আমি পজেটিভ।
আমরা অনেক চাপের মধ্যে আছি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন যে তারা রাস্তাঘাট আটকে রাখে, এটা সত্য যে আমরা অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক সরকারের মতো শক্তিশালী না। এখন যদি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন দোকানদাররা দোষ দেওয়া শুরু করে। ১০০টা চাপের মধ্যে আমরা ১০টা মানি। এই যেমন রেলওয়ের ডিমান্ড ওভারটাইম দাও, দিলাম। এরপর বলে লিমিট উঠিয়ে দাও, সেটাও উঠিয়ে দিলাম। কয়েকদিন পর বলবে, চাকরি থাকবে না বেতন দাও? তখন আমি কী করবো? সেটা নিয়ে চিন্তায় আছি।
এডিবি ডিসেম্বরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জুনে বিশ্বব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন দেবে এবং আইএমএফ মার্চে না হয় জুনে ২ বিলিয়ন ডলার দেবে। তাদের কতগুলো শর্ত আছে। যেমন— ট্যাক্স, ভ্যাট বাড়ানোর। আয়কর না বাড়িয়ে ভ্যাট বাড়ানোর পক্ষে আমি যৌক্তিকভাবে দেখলাম, আয়কর বাড়ালে সংসদে যেতে হবে। আর যদি ভ্যাট ট্যাক্স বাড়াই তাহলে একটি এসআরও দিয়ে আমি করতে পারবো। তাই ভ্যাট বাড়িয়েছি।
উল্লেখ্য, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি এসআরও জারির মধ্য দিয়ে ভ্যাট বাড়ানোর আদেশ জারি করেছিলো সরকার।