Homeজাতীয়ভারতের চোখে বাংলাদেশকে দেখা যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক হবে না: ড্যানিলোভিচ

ভারতের চোখে বাংলাদেশকে দেখা যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক হবে না: ড্যানিলোভিচ


ভারতের চোখে বাংলাদেশকে দেখা যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন এফ ড্যানিলোভিচ। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে এক তথ্য যুদ্ধের সম্মুখীন। এর বড় অংশ চালানো হয় ভারত থেকে। ভারত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে নীতি অনুসরণ করছে, তা ভারতের স্বার্থের অনুকূলে নয়। তাই ভারতের চোখে বাংলাদেশকে দেখা যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক হবে না।’

আজ শনিবার গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন গতিপথ শীর্ষক এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলামও এই সংলাপে অংশ নেন।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এ সংলাপের আয়োজন করে।

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মিথ্যা প্রচারণার প্রসঙ্গে ড্যানিলোভিচ বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে একটি তথ্য যুদ্ধের সম্মুখীন। এর বড় অংশটি চালানো হয় ভারত থেকে। ভারত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে নীতি অনুসরণ করছে, তা ভারতের স্বার্থের জন্য অনুকূল নয়। কিছু গোষ্ঠী উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রম সম্পর্কিত বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের এক প্রশ্নের জবাবে ড্যানিলোভিচ বলেন, ‘ভারতের চোখে বাংলাদেশকে দেখা যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক হবে না। বাংলাদেশের জন্য দুই ব্যক্তির একটি প্রতিষ্ঠানকে ইউএসএআইডি ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার দিয়েছে— প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর। কিছু ব্যক্তি প্রেসিডেন্টকে ভুল তথ্য দিয়েছিল। তাঁরা দুই দেশের সম্পর্ক অস্থিতিশীল করতে চায়। গণমাধ্যমও প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে ভুলভাবে নিয়েছে।’

২০০৭-২০০৮ সালে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে ড্যান মজিনার সহকারী কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ড্যানিলোভিচ বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ভুল পক্ষে ছিল। বাংলাদেশে ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র ভুল করেছিল। সে সময় মার্কিন সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। সেনা কর্মকর্তাদের বক্তব্যের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সমর্থন নিয়ে সে ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে।

রাজধানীর ইস্কাটনে ‘মাইলাম ও জন-এর সঙ্গে সংলাপ’ অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ইস্কাটনে ‘মাইলাম ও জন-এর সঙ্গে সংলাপ’ অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

শাসক দলের জবাবদিহির অভাব এখানকার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর একটি উল্লেখ করে ড্যানিলোভিচ বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সমর্থন নিয়ে সেই সময়কার ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে। বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অর্থায়ন নীতি এখানকার চলমান সংস্কারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। গত ১৭ বছরে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার করে সুশাসন ও সংস্কারের জন্য ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।’

সেনাবাহিনী বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে এই মার্কিন কূটনীতিক বলেন, গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে হলে একটি শক্তিশালী সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক অপরিহার্য।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বারবার গণতন্ত্র থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়ে উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, শেখ হাসিনা ২০১৪ সাল থেকে ধীরে ধীরে গণতন্ত্র কেড়ে নিতে শুরু করেন। কিন্তু এখানে স্থিতিশীলতার জন্য মানুষ পরিবর্তন চায়। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়ে পরবর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা দরকার।

বিশ্বের হালনাগাদ প্রবণতাগুলো চিহ্নিত করতে কোথায় কী পরিবর্তন আসছে, তার ওপরও নজর রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

উইলিয়াম মাইলাম ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি।’

সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব) এএমএসএ আমিন তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত যাতে হস্তক্ষেপ না করে— সে বিষয়ে দেশটিকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, রোড শো করে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীলতা দরকার।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের প্রধান মাহরুখ মহিউদ্দিন ও সিজিএস চেয়ারম্যান মুনিরা খানসহ অন্যরা অংশ নেন।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত