বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ৩২টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ১৬টি ফ্যাক্টরির কোনও অস্বিত্ব নেই। তবে ওই কোম্পানিগুলোর বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত ৩২টি ফ্যাক্টরির বিপরীতে ২৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকাসহ বেক্সিমকো লিমিটেডের মোট ব্যাংক ঋণ বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে শুধু জনতা ব্যাংকের পাওনা ২৩ হাজার ২৮৫ দশমিক ৪২ কোটি টাকা। মালিকরা ও অর্থ কোথায় গেছে জানা নেই।
বৃহস্পতিবার (২২ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির প্রেস বিফিংয়ে এসব তথ্য জানান শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘গত ২১ জানুয়ারি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কর্মচারী ও শ্রমিকরা গাজীপুরের শ্রীপুর মায়ানগর মাঠে জমায়েত হয়ে লে-অফ প্রত্যাহার করে ফ্যাক্টরিগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তারা ঘোষণা দেন, ২২ জানুয়ারি বিকাল ৩টার মধ্যে ফ্যাক্টরি খুলে না দিলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধসহ শাটডাউন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিকদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ১২টি ফ্যাক্টরি ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক লে-অফ করা হয়েছে, যা সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত নয়। তিনটি ফ্যাক্টরি বর্তমানে চলমান রয়েছে। ’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকার গত বছরের ২৪ নভেম্বর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে পারিপার্শ্বিক শিল্প স্থাপনা ও জনজীবনে সৃষ্ট অভিঘাত পর্যালোচনা ও তার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় কার্যব্যবস্থার সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘ইতোমধ্যে ওই কমিটির পাঁচটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জনতা ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিক-কর্মচারীদের তিন মাসের বকেয়া বেতন সংস্থান করা হয়েছে।
এছাড়া আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় অর্থ বিভাগ ৫০ কোটি টাকা এবং সরকারের কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার তথ্য দেন তিনি।
সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারের উদ্যোগে মোট ২২৩ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা টাকা গ্রুপটির কোম্পানিগুলোকে দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অত্যধিক ঋণগ্রস্ত অবস্থায় ফ্যাক্টরিগুলো চালানোর জন্য কোনও ব্যাংকই তাদেরকে নতুন ঋণ দিতে পারছে না।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাইকোর্টে চলমান রিট মামলায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবী পরিবর্তন, এটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া, বেক্সিমকো গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোয় স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিষয় তুলে ধরেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘রবিবার (২৬ জানুয়ারি) বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সংকট নিরসনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং ঋণদাতা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সভা ডাকা হয়েছে। এছাড়াও আগামী ২৮ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় সর্বশেষ অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং দায়-দেনা ও সম্পদের বিবরণ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
উপদেষ্টা জানান, সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধে সজাগ। তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে উপদেষ্টা কমিটি সর্বোচ্চ সোচ্চার রয়েছে। দেশের স্বার্থে শ্রমিকদের ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে আর ছিলেন– বাণিজ্য উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত, বিজিএমইএ’র প্রশাসক, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, বেক্সিমকো লিমিটেডের রিসিভার এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।