বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেছেন, বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মের উত্থান ঘটছে, যা আগামী ৪০ বছর দেশের ভাগ্যনির্ধারণ করবে। এ পরিবর্তন শুধু অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নয়, বরং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে তারা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আজ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ‘হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় হুমায়ুন কবির এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিস (বিআইপিএস) এই সভার আয়োজন করে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে তৃতীয় বড় প্রজন্মগত পরিবর্তন বলে উল্লেখ করেন হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ১৯৪০-এর দশকের তরুণেরা ভারত-পাকিস্তান গঠনে, ১৯৭০-এর তরুণেরা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভূমিকা রেখেছিল। আর ২০২৪ সালে নতুন প্রজন্ম দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এই কূটনীতিক আরও বলেন, এ প্রজন্ম তাদের অধিকার রক্ষায় দৃঢ়, উত্তম ও দায়বদ্ধ শাসনব্যবস্থা চায়। তারা প্রচলিত ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীন। তারা কর্তৃত্ব মেনে নেয় না এবং মর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়তে চায়। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।
সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে দেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তিত হওয়ার সমালোচনা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন একটি পররাষ্ট্রনীতি হওয়া উচিত, যেটি বাংলাদেশের জনগণের উপকারে আসবে। কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে, যখনই বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তখনই আমাদের ফরেন পলিসি পরিবর্তন হয়েছে। একেক সরকারের সময় একেক রকম।’
শামা ওবায়েদ আরও বলেন, বিদেশনীতি হতে হবে সুসংগঠিত ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে, যাতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঘটনা নিয়ে ভারতের বিবৃতি দেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেত্রী বলেন, ‘কিছুদিন আগে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে ভারত একটি স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিয়েছে। আমাদের দেশে যখন গুম হয়েছে, খুন হয়েছে কিংবা যখন জুলাই-আগস্টে টার্গেট করে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তখন কিন্তু ভারত কোনো বিবৃতি দেয়নি। এখন তারা যে বিবৃতি দিচ্ছে এটাকে আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো বলব।’
আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আফজাল এইচ খান বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে পারসন টু পারসন থেকে চলে আসতে হবে। ইন্ডিয়া বিগ ব্রাদার, আমরা মেনে নেই তাদের আধিপত্য থাকবে। কিন্তু আমাদের সম্পর্ক থাকবে ঢাকা এবং দিল্লির মধ্যে; হাসিনা ও মোদির মধ্যে নয়। জনগণের সঙ্গে জনগণের সংযোগ আমরা চাই। সরকারের সঙ্গে সরকারের সহযোগিতা চাই।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘সংস্কার আগে হবে না নির্বাচন আগে হবে, সে তর্কে আমি যাব না। কিন্তু সংস্কার করার জন্য উদ্দেশ্যের প্রতি একনিষ্ঠতা থাকতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক হয়ে যাবে, লাইনে চলে আসবে যদি আমরা ভেতরে ঠিক থাকি।’
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. সি এ এফ দৌলা। এ ছাড়াও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আমিনুল করিম।