Homeজাতীয়বিদ্যুতের লুজ কানেকশন থেকে আগুনের সূত্রপাত

বিদ্যুতের লুজ কানেকশন থেকে আগুনের সূত্রপাত


সচিবালয়ে গভীর রাতে ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বিদ্যুতের ‘ত্রুটি’ থেকে; প্রাথমিক তদন্তে অন্য কিছু বা ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি। অগ্নিকা-ের কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ সংযোগ ও বৈদ্যুতিক স্পার্ককে চিহ্নিত করেছে এ ঘটনায় গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে এটি উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বিদ্যুতের ‘লুজ কানেকশনের’ কারণে। 

আগুনের কারণ অনুসন্ধানে একাধিক দল কাজ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল ছিল, দমকল বাহিনীর যারা ফায়ার হ্যান্ডেল করে তাদের এক্সপার্ট ছিল, সেনাবাহিনী থেকে তাদের বম্ব স্কোয়াড ছিল, তাদের বিশেষায়িত কুকুরগুলো-ডগ স্কোয়াড তারাও কাজ করেছে। পুলিশের সিআইডি থেকে তারা কাজ করেছে। এরা সকলে মিলে একত্রে একটি বিষয়ে এক মত হয়েছে যে এটি একটি লুজ কানেকশনের কারণে ইলেকট্রিসিটি থেকে আগুনের উৎপত্তি হয়েছে। এটি আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত। এতে অন্য কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা আমরা খুঁজে পাইনি।’

সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ দলের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতে চান এবং ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

তদন্ত কমিটির সদস্য বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বলেন, ‘সচিবালয়ে আগুনের সূত্রপাত  বৈদ্যুতিক স্পার্ক থেকে হয়েছে। প্রথম দিন থেকে আমরা যথেষ্ট সময় নিয়ে আন্তরিকভাবে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় আমরা সুনির্দিষ্ট একটি রিপোর্ট তৈরি করতে পেরেছি। যদিও সুনির্দিষ্ট বলছি, তারপরও এটিকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করার জন্য আরও কিছু টেস্ট দেশে-বিদেশে করাব। তাতে আমাদের রিপোর্ট আরও নিশ্চিত হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা দেখেছি, ভিডিও পাওয়ার আগে এবং পরে মিলিয়ে দেখেছি, ফলাফল একই।’

তিনি বলেন, ‘আগুনের সূত্রপাতের সময় ১টা ৩২ থেকে ৩৯ মিনিট। সূত্রপাত একটি নির্দিষ্ট সময়ে নয়, সাত মিনিট ধরে আস্তে আস্তে স্পার্কের মাধ্যমে যে জায়গায় আগুন লেগেছে সেটি গরম হয়েছে। সেখান থেকে ম্যাটেরিয়াল গলে পড়েছে। তারপর সেটা একসময় ইনগনিশন টেম্পারেচারে গিয়েছে। ‘তারপর আগুন ধরেছে।’

মাকসুদ হেলালী বলেন, আগুন ধরার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ধোঁয়া হয়েছে এবং ফ্লেম ভার্টিকালি ওপরের দিকে উঠে গেছে। আর ধোঁয়া সচিবালয়ের একটি টানেলের প্রভাবে পশ্চিম দিকে বেরিয়ে গেছে। এতে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে আগুন দুই জায়গায়। বাস্তবে আগুনের সোর্স একটাই। কিন্তু বাতাসের গতি, বিল্ডিংয়ের ডিজাইনের ভিন্নতার কারণে দুদিকে প্রবাহিত হয়েছে।

তদন্ত কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘মোটামুটি ১২-১৪ মিনিটে যে আগুন উৎপাদিত হয়েছে সেটি ছড়িয়ে চূড়ান্ত আগুনে রূপায়িত হয়েছে। ভার্টিকালি উপরে উঠে যাওয়ায় এটি নেভানো অত্যন্ত কঠিন পর্যায়ে চলে গেছে। ছয় তলার আগুন যখন ছড়িয়ে গেছে সেটি না নিভিয়ে সাত তলায় যাওয়ার সুযোগ ছিল না। যার কারণে ফায়ার ব্রিগেডকে ছয় তলা শেষ করে সাত তলায় উঠতে হয়েছে। জীবনের রিস্ক নিয়েই তাদের এই কাজ করতে হয়েছে। আমরা এসব তথ্য নিয়ে সিআইডিসহ সবার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছি, আমাদের অঙ্ক করা জিনিস আর ভিডিও এভিডেন্স ৯৯ ভাগ মিলে গেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি আগুন এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে।’

এদিকে সচিবালয়ে আগুনের বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা জানান, ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরক দ্রব্যের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

ব্রিফিংয়ের আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয় এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তদন্ত কমিটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে  বৈঠক করেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুন লেগে ষষ্ঠ থেকে নবম তলায় থাকা পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর পুড়ে যায়। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে। অগ্নিকা-ের ঘটনা খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত