Homeজাতীয়বদলাচ্ছে বিসিএসের সিলেবাস

বদলাচ্ছে বিসিএসের সিলেবাস


বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) নিয়োগ পরীক্ষার সিলেবাস বদল হচ্ছে। এই সিলেবাসকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এ জন্য গঠিত কমিটি কাজও শুরু করেছে। কমিটির কাজ শেষে অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে পরিমার্জিত সিলেবাস চূড়ান্ত করা হবে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনও বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস সংশোধন ও ছয়টি আবশ্যিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। বিসিএস কর্মকর্তা নিয়োগে তিন ধাপে প্রার্থী বাছাই করা হয়। এগুলো হলো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা।

পিএসসির সূত্র বলেছে, বিসিএসের সিলেবাস বদলের উদ্যোগের অংশ হিসেবে বর্তমান সিলেবাস পর্যালোচনার জন্য কমিশনের নবম বিশেষ সভায় পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। পরে কমিটি গঠন করা হয় এবং পিএসসির একজন সদস্যকে এর আহ্বায়ক করা হয়। কমিটি ইতিমধ্যে একটি বৈঠক করেছে। তবে পিএসসিতে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি ও কিছু সদস্য বাদ পড়ার কারণে ‘সিলেবাস রিভিউ কমিটি’ পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিটির সদস্যসংখ্যা বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম ১২ মার্চ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিএসসি কার্যালয়ে নিজ দপ্তরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে যে সিলেবাসে বিসিএস পরীক্ষা (প্রিলিমিনারি, লিখিত পরীক্ষা) হচ্ছে, তা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। এ জন্য বর্তমান সিলেবাস পর্যালোচনায় গঠিত ‘সিলেবাস রিভিউ কমিটি’ কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, সময়ের প্রয়োজনে কমিটির আকার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিসিএস পরীক্ষার প্রথম ধাপে প্রিলিমিনারিতে ২০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হয়। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা হয়। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বরের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া প্রতিবেদনে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস সংশোধন ও ছয়টি আবশ্যিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে। বিষয়গুলো হলো ১০০ নম্বরের বাংলা রচনা; ১০০ নম্বরের ইংরেজি রচনা; ১০০ নম্বরের ইংরেজি রচনা ও সারাংশ লেখা; ১০০ নম্বরের বাংলাদেশের সংবিধান, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি; ১০০ নম্বরের আন্তর্জাতিক ও সমসাময়িক বিষয়াবলি এবং ১০০ নম্বরের সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সমাজ ও পরিবেশ এবং ভূগোল। আবশ্যিক বিষয়ের পাশাপাশি ছয়টি ঐচ্ছিক বিষয় (প্রতিটিতে ১০০ নম্বর) বিসিএসের মূল লিখিত পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।

পিএসসি থেকে জানা যায়, ৩৫তম বিসিএস থেকে নতুন সিলেবাস কার্যকর হয়েছে। এই বিসিএস থেকে মোট ১০টি বিষয়ে ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়গুলো হলো বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, ভূগোল-পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি, গাণিতিক যুক্তি, মানসিক দক্ষতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন। এর আগে চারটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান) ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হতো। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা সাধারণ ক্যাডারের জন্য ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। বিষয়গুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা এবং সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। উভয় ক্যাডার হলে ২০০ নম্বরের পেশাগত বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত হয়।

সিলেবাস রিভিউ কমিটির বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, এই কমিটিতে শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা আছেন। কমিটির কাজ শেষ হলে অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পিএসসির ভাবনা বিনিময় করা হবে। এরপর সবার মতামত নিয়ে সিলেবাস চূড়ান্ত করা হবে। মূল কথা হলো, পিএসসি কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চায় না। আগামী ছয় মাস এ বিষয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। কাজটি তাঁরা দ্রুততম সময়ে শেষ করতে চান।

অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম বলেন, সিলেবাস পরিমার্জন-পরিবর্তন করেই তা চাকরিপ্রার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। শুধু সিলেবাস নয়, যত পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলছে, তা চাকরিপ্রার্থীদের আগে থেকেই জানানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যাতে করে তাঁরা সে অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করতে পারেন। তিনি বলেন, কিছু কমিউনিকেশন ভিডিও তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন বলা যায়, যদি লিখিত পরীক্ষার উত্তর লেখায় কোনো পরিবর্তন আনা হয় তাহলে সেটা (উত্তর) কীভাবে লিখতে হবে সে অনুযায়ী গাইডলাইনভিত্তিক ভিডিও তৈরি করা হবে।

একবার বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে একাধিকবার লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে পিএসসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন। এর বিভিন্ন দিক রয়েছে। সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিভিন্ন দেশে এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পিএসসি আরও কিছু নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। পিএসসি বলছে, এসব বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন। অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমও বলেছেন, পিএসসিতে তাঁরা যেসব গুণগত পরিবর্তন আনতে চাইছেন সে জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন। যেমন–সার্কুলার সিস্টেমে খাতা দেখা। অর্থাৎ একটি খাতার একেকটি প্রশ্নের উত্তর একেকজন পরীক্ষক পিএসসিতে বসে দেখবেন। এটি করতে হলে খাতা দেখার সম্মানী বাড়াতে হবে। এ ধরনের কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করলে এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএসের নিয়োগ শেষ করা সম্ভব।

সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে পিএসসিকে যে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী কাজ করতে পারলে সব পরিকল্পনাই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন পিএসসি চেয়ারম্যান।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত