Homeজাতীয়ফুল ভাসিয়ে পাহাড়ে বৈসাবি উৎসব শুরু

ফুল ভাসিয়ে পাহাড়ে বৈসাবি উৎসব শুরু


নতুন বছরকে বরণ ও পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জনগণ প্রতিবছর বৈসাবি উৎসব পালন করে থাকে। এবারও ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে তাদের এ উৎসব। গতকাল শনিবার বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই উৎসব ঘিরে পাহাড়ে এখন সাজসাজ রব।

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম অঞ্চলগুলোতে মারমাদের সাংগ্রাই, ত্রিপুরাদের বিষু, চাকমাদের ফুলবিজুর মধ্য দিয়ে পাহাড়ে বৈসাবি উৎসব শুরু হয়েছে। এই বৈসাবি উৎসব ঘিরে এখন পাহাড়জুড়ে বইছে আনন্দের বন্যা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পয়লা বৈশাখ এক নিয়মে পালন করলেও পাহাড়ে পালন করা হয় ভিন্নভাবে। আট দিনব্যাপী ব্যাপক উৎসবে পাহাড় আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে।

গতকাল ভোরে সূর্য ওঠার আগের থানচি উপজেলার বলিপাড়া বাজারের শঙ্খ নদের তীর ও তার আশপাশের বিভিন্ন খাল ও ছড়ায় গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে বাহারি রঙের ফুল দিয়ে প্রার্থনা করে বৈসাবি উৎসবের আনুষ্ঠানিকতার শুভ সূচনা করে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়; যেটি ফুলবিজু নামেও পরিচিত। এর আগের সকাল থেকে এলাকাজুড়ে বর্ণাঢ্য গণশোভাযাত্রা করে এসব সম্প্রদায়ের লোকজন।

চাকমা লোকরীতির বিশ্বাস, পুরোনো বছরের দুঃখ, গ্লানি ও পাপাচার থেকে মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবতার উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে পুরোনো বছরকে বিদায় জানালে নতুন বছর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা দেবে। তাই ফুলবিজুর দিন ভোর থেকে বাড়ির পাশের নদী ও খালে গিয়ে প্রার্থনারত হয়ে পুরোনো বছরকে বিদায় জানায় এ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সী নর-নারী।

পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাহাড়ের প্রধান উৎসব বৈসাবি শুরু হয়েছে। শনিবার ভোরে সূর্য উদয়ের আগে থেকে উপজেলার ধুদকছড়া, বরকলক, মধু মঙ্গলপাড়া, চেঙ্গী, পুজগাং ও শান্তিপুর রাবার ড্যামসমূহে চেঙ্গী নদীর চরে ও তার আশপাশের বিভিন্ন খাল-ছড়া—পুরো এলাকায় বর্ণাঢ্য গণশোভাযাত্রা করে। গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে বাহারি রঙের ফুল দিয়ে প্রার্থনা করতে বৈসাবি উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুভ সূচনা করে চাকমা-ত্রিপুরা সম্প্রদায়। এ দিনটি চাকমাদের ফুলবিজু নামেও পরিচিত।

শুক্রবার সকালে ত্রিপুরা সম্প্রদায় শোভাযাত্রা করে, আজ রোববার মারমা সম্প্রদায় ও সোমবার বাঙালি ও প্রশাসনের শোভাযাত্রা রয়েছে। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী জলখেলা অনুষ্ঠান রয়েছে।

রাবার ড্রাম ফুলবিজু উৎস উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি প্রণয় কুমার চাকমা বলেন, ‘চাকমা লোকরীতির বিশ্বাস, পুরোনো বছরের দুঃখ, গ্লানি ও পাপাচার থেকে মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবতার উদ্দেশে ফুলপূজার মাধ্যমে পুরোনো বছরকে বিদায় জানালে নতুন বছর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা দেবে।

তাই ফুলবিজুর দিন ভোর থেকে বাড়ির পাশের নদী ও খালে গিয়ে প্রার্থনারত হয়ে পুরোনো বছরকে বিদায় জানায় চাকমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সী নর-নারী। তবে এখন ফুলবিজু শুধু চাকমা সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নেই। মারমা, ত্রিপুরা ও স্থানীয় বাঙালিরাও অংশ নিচ্ছেন ফুলবিজুতে।’

ফুলবিজু প্রার্থনা শেষে তরুণ-তরুণীরা মেতে ওঠে আনন্দ উৎসবে। নদীতে স্নান শেষে বাড়ি গিয়ে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাজসজ্জা শেষে প্রস্তুতি চলে অতিথি আপ্যায়নের। উপজাতি অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে চলছে বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলাও।

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা মৌজায় বসবাসরত তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষেরা তাদের বিষু উৎসবের প্রথম দিন (ফুলবিষুর দিন) কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী স্টেডিয়ামসংলগ্ন কর্ণফুলী নদীতে ফুল ভাসাল। এ সময় তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে শতাধিক নারী-পুরুষ এই ফুল ভাসানো উৎসবে অংশ নেয়। শনিবার সকাল ৮টায় এই উৎসবের উদ্বোধন করেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো রুহুল আমিন।

ফুল ভাসানো উৎসবে অংশ নিতে আসা লাকি তঞ্চঙ্গ্যা, রত্না প্রভা চাকমা এবং গোপা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘সেই ভোর ৪টায় উঠে স্নানকর্ম সেরে ফুল তুলে আজকে আমরা কর্ণফুলী নদীতে ফুল ভাসাতে আসলাম। আগামী বছর যাতে আমাদের ভালো কাটে, সেই জন্য আমরা এই প্রার্থনা করছি।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত