বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং জনবান্ধব করতে ১৩টি খাতে ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের প্রতি পুলিশের দায়বদ্ধতাও নিশ্চিত হবে। প্রতিটি সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ, আটক, গ্রেফতার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়সহ ১৩টি বিষয়ের ওপর সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।
এরআগে গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশ হস্তান্তর করেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্যরা।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ১১০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে পুলিশের ১৩টি বিষয়ে ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তার করা হয়েছে। তাছাড়া বাহিনীর সংস্কারের জন্য ২২টি আইনের সংশোধন ও পরিমার্জন চেয়েছে কমিশন। এসব সংস্কার বাস্তবায়নের চারটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। এরমধ্যে কিছু বিষয় অবিলম্বে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া স্বল্প মেয়াদি, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদি বাস্তবায়নের সুপারিশের কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ সংস্কার কমিশন থেকে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন ও ১৯৪৩ সালের পুলিশ রেগুলেশন্স যথাযথ অনুসরণ করে এবং সময়ের ব্যবধানে আধুনিক বিশ্বে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে যেসব প্রযুক্তিগত কৌশল ব্যবহার করা হয়— তা বিবেচনায় নিয়ে পাঁচ ধাপে বল প্রয়োগের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই ধাপগুলো জাতিসংঘ কর্তৃক বল প্রয়োগের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। এতে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা যাবে।
বলপ্রয়োগের নিয়ম ও নীতিমালা (স্বল্পমেয়াদি/ ১ বছর)
পুলিশের বলপ্রয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর সরাসরি প্রভাব পড়ে মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর। এজন্য একটি নির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা অত্যন্ত জরুরি। বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মনীতির স্পষ্টতা নিশ্চিত করতে এবং মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ বজায় রাখতে পাঁচটি ধাপে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। এই ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুলিশি কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি আসবে।
আটক, গ্রেফতার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদে স্বচ্ছতা (স্বল্পমেয়াদি/ ১-২ বছর)
আটক, গ্রেফতার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশের কার্যক্রমে এই ক্ষেত্রগুলোতে অস্পষ্টতা বা হয়রানির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, যা জনমনে আস্থা নষ্ট করে। তাই এসব প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে প্রাসঙ্গিক নিয়ম ও নীতিমালা অনুসরণ করা জরুরি। এটি নিশ্চিত করবে যে, এসব কার্যক্রম কেবল আইনি চাহিদা পূরণ করবে না, বরং জনগণের অধিকারও সুরক্ষিত থাকবে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে, থানায় স্বচ্ছ কাচের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ স্থাপন করতে হবে, নারী পুলিশের উপস্থিতিতে নারী আসামির জিজ্ঞাসাবাদ বাধ্যতামূলক করতে হবে, অভিযানের সময় বডি-ওন ক্যামেরা ও জিপিএস ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, রাতের গৃহ তল্লাশিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা স্থানীয় প্রতিনিধি থাকতে হবে, মিথ্যা মামলায় জড়ানো পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
মানবাধিকার রক্ষা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি (মধ্যমেয়াদি/ ২-৩ বছর)
মানবাধিকার রক্ষা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করা এবং সবার জন্য সুষ্ঠু ও ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবাধিকার রক্ষায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জবাবদিহির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়া শুধুমাত্র পুলিশ বাহিনীর মধ্যে দায়বদ্ধতা বাড়াবে না, বরং সমাজে শান্তি ও সুবিচারের পরিবেশ সৃষ্টিতেও সাহায্য করবে। মানবাধিকার সুরক্ষিত থাকলে রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের বিশ্বাসও দৃঢ় হয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তের ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে, পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে বিশেষ সেল গঠন করতে হবে, ৯৯৯ নম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা চালু করতে হবে, সাক্ষী ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা দিতে আলাদা আইন প্রণয়ন করতে হবে, র্যাবের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে তাদের প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
পুলিশের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো (দীর্ঘমেয়াদি/ ৩-৫ বছর)
পুলিশ বাহিনীর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং তাদের কার্যক্রমে জবাবদিহি বৃদ্ধি করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি। এই উদ্যোগে, পুলিশের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো তৈরি করা হবে। পাশাপাশি, পুলিশের মধ্যে সুষ্ঠু তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যাতে কোনও ধরনের অপব্যবহার বা দুর্নীতির সুযোগ না থাকে। নাগরিকদের প্রতি পুলিশের দায়িত্বশীলতা বজায় রেখে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত আইনগত ও প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে এবং পুলিশের কার্যক্রম যাতে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
থানায় মামলা, তদন্ত ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের সহজীকরণ (স্বল্পমেয়াদি/ ১ বছর)
পুলিশের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো নিয়ে বলা হয়েছে, পুলিশ বাহিনীর স্বাধীনতা ও কার্যক্রমে জবাবদিহি নিশ্চিত করা একটি সুসংহত এবং স্বচ্ছ রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। পুলিশের স্বাধীনতা তাদের পেশাদারত্বের মান বজায় রাখতে সহায়ক, তবে সেই স্বাধীনতা অবশ্যই জবাবদিহির সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। একটি শক্তিশালী কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর কর্মকাণ্ডের প্রতি জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা বৃদ্ধি করা সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদে, এই ব্যবস্থা পুলিশের কার্যক্রমের সুষ্ঠুতা, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করবে— যা সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সাধারণ ডায়েরি (জিডি) গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে, মামলার এফআইআর (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) নিতে গড়িমসি করলে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, জাতীয় পরিচয়পত্রধারীর পুলিশ ভেরিফিকেশন সহজ করতে হবে এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাই বন্ধ করতে হবে।
যুগোপযোগী আইন ও প্রবিধানমালা (মধ্যমেয়াদি/ ২-৪ বছর)
যুগোপযোগী আইন ও প্রবিধানমালা বলা হয়, আইন ও প্রবিধানমালার যুগোপযোগিতা নিশ্চিত করা একটি আধুনিক সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত সমাজ, প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইন ও প্রবিধানগুলো সংশোধন ও উন্নয়ন করা অত্যন্ত জরুরি। মধ্যমেয়াদে, যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন বা পুরনো আইনের সংস্কার করা পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি করবে, আইন প্রয়োগে সুনিশ্চিত এবং মানবাধিকার রক্ষা নিশ্চিত করবে। এটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
১৮৬১ সালের ঔপনিবেশিক পুলিশ আইন সংস্কার করতে হবে, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধিতে মানবাধিকার সুরক্ষায় সংশোধন আনতে হবে। ১৯৪৩ সালের পুলিশ প্রবিধানমালার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হবে।
পুলিশের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রতিকার (মধ্যমেয়াদি/ ২-৩ বছর)
সংস্কার কমিশনে পুলিশের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রতিকারে বলা হয়, পুলিশের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং দ্রুত প্রতিকার ব্যবস্থা একটি শক্তিশালী আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা গড়ার জন্য অপরিহার্য। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করতে হলে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। মধ্যমেয়াদে, পুলিশের আচরণ ও কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, নজরদারি এবং কার্যকর অভিযোগ ব্যবস্থাপনা চালু করা প্রয়োজন। দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলার জন্য কড়া শাস্তি, যথাযথ তদন্ত এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, যা পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংস্কারের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
থানায় সর্বদলীয় পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করতে হবে, দুর্নীতি তদন্তের জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে এবং পুলিশের পুরস্কার (বিপিএম/পিপিএম) প্রাপ্তির মানদণ্ড নির্ধারণে স্বচ্ছতা আনতে হবে।
পুলিশ বাহিনীর ভেতরের দুর্নীতি নির্মূল (স্বল্পমেয়াদি/ ১-২ বছর)
পুলিশ বাহিনীর ভেতরের দুর্নীতি বন্ধে কমিশনের সুপারিশমালায় বলা হয়, পুলিশ বাহিনীর ভেতরের দুর্নীতি নির্মূল করতে স্বল্পমেয়াদে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত, অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। পুলিশ বাহিনীর মধ্যে স্বচ্ছতা এবং নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি, বাহিনীর সব সদস্যের পেশাদারত্ব বৃদ্ধি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, বদলি ও পদোন্নতিতে রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রভাব খতিয়ে দেখতে হবে, থানার জরুরি খাতগুলোতে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং থানায় কোনও ধরনের মধ্যস্থতা নিষিদ্ধ করতে হবে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন (স্বল্পমেয়াদি/১-২ বছর)
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন নিয়ে বলা হয়, স্বল্পমেয়াদে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তন জরুরি। সিগন্যাল সিস্টেম আধুনিকায়ন, এক্সেস কন্ট্রোল ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। যানজট কমাতে এবং দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি এবং নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য গণমাধ্যম ও প্রচারণার মাধ্যমে নিয়মিত অবহিতকরণ ও ট্রাফিক আইন মানার তাগিদ দেওয়া উচিত।
ট্রাফিক মামলায় বডি-ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে, ট্রাফিক মামলার রেকার বিল নিরীক্ষার জন্য বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং ট্রাফিক চেকপোস্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (মধ্যমেয়াদি /২-৩ বছর)
পুলিশ বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানে করে তুলতে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে জোরদার করা হয়েছে। মধ্যমেয়াদে পুলিশের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক নিয়োগ এবং আধুনিক প্রশিক্ষণ উপকরণ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পুলিশ সদস্যদের আইনি জ্ঞান, মানবাধিকার সংক্রান্ত দক্ষতা, এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ আয়োজন প্রয়োজন। বিশেষ করে সাইবার অপরাধ, ফরেনসিক তদন্ত, এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের কাছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও কার্যকারিতা বেড়ে যাবে।
প্রশিক্ষণের ফলাফলকে পদোন্নতি ও কর্মমূল্যায়নের (এসিআর) সঙ্গে যুক্ত করতে হবে, আধুনিক অপরাধ তদন্তের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বডি-ওর্ন ক্যামেরার ব্যবহার ও বলপ্রয়োগের বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
ভৌগোলিক অবস্থানভেদে পুলিশিং ব্যবস্থা (মধ্যমেয়াদি/ ২-৩ বছর)
ভৌগোলিক অবস্থানভেদে পুলিশিং ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যমেয়াদে পুলিশের কার্যক্রমের উন্নয়নের জন্য ভৌগোলিক অবস্থানভেদে পৃথক পুলিশিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। শহর এবং গ্রামীণ এলাকাগুলোর নির্দিষ্ট চাহিদা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী আলাদা ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। শহরাঞ্চলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে, আর গ্রামীণ এলাকায় অপরাধ প্রতিরোধ এবং কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমে জোর দেওয়া প্রয়োজন। এসব ব্যবস্থার বাস্তবায়ন হলে পুলিশি সেবা আরও কার্যকর ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে।
নদীপথে অপরাধ প্রতিরোধে ভাসমান থানা স্থাপন করতে হবে এবং পার্বত্য অঞ্চলে স্থানীয় সংস্কৃতি ও সংবেদনশীলতাকে গুরুত্ব দিয়ে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
গবেষণা ও উন্নয়ন (দীর্ঘমেয়াদি/ ৩-৫ বছর)
পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমের মান উন্নয়নে গবেষণা ও উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় পুলিশিং পদ্ধতিগুলোর আধুনিকীকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে। নতুন প্রযুক্তি, কৌশল এবং মানদণ্ডের উন্নয়ন পদ্ধতিগুলো পুলিশ বাহিনীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি, অপরাধ প্রবণতা এবং পুলিশের কার্যক্রম সম্পর্কিত গবেষণা পরিচালনা করে বাস্তবিক সমস্যার সমাধান বের করা সম্ভব হবে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সেন্টার ফর পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি)
গঠন করতে হবে, সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং আইসিটি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
নারী, শিশু ও জেন্ডার সংবেদনশীলতা (মধ্যমেয়াদি/ ২-৩ বছর)
পুলিশ বাহিনীতে নারী, শিশু এবং জেন্ডার সংবেদনশীলতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায়, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এই সংবেদনশীলতা বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা নির্যাতনের ক্ষেত্রে আরও দক্ষতার সঙ্গে সাড়া দেওয়ার জন্য নীতিমালা এবং প্রোটোকল তৈরি করা হবে। পাশাপাশি, জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ ও জনগণের প্রতি সুবিচারের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য পুলিশ বাহিনীতে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে, যা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহায়ক হবে।
শিশু আইন, ২০১৩-এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ পুলিশ ইউনিট গঠন করতে হবে।
প্রস্তাবিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে পুলিশ বাহিনীর পেশাদারত্ব, দক্ষতা ও জনবান্ধবতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে জনগণের আস্থা ফেরানো সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশ একটি আধুনিক, কার্যকর ও মানবাধিকারসম্মত পুলিশ ব্যবস্থা পাবে।