ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রতিষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশনের ১৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ১৪টি ব্যাংক হিসাবে ৪৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জমা আছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই নির্দেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে তাঁর মা শেখ হাসিনার যোগসাজশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিজস্ব দলিলের বিধি, নীতিমালা ও নৈতিক মানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের মাধ্যমে উক্ত পদে নিয়োগলাভ এবং মায়ের ক্ষমতা ব্যবহার করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন এবং মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, সূচনা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা ফাউন্ডেশনের অস্থাবর সম্পদগুলো অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। তাই এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পতিত সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতিবাজ সাবেক মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে। তার অংশ হিসেবে সংস্থাটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় প্রতিদিনই দুর্নীতির অভিযোগ থাকা এসব ব্যক্তি ও তাদের মালিকানাধীন সম্পদ জব্দ এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিচ্ছেন আদালত। এসব তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু দুদকের প্রসিকিউশন দপ্তর বিষয়টি গোপন রাখে। আদেশের পর সংবাদ প্রকাশের জন্য বিস্তারিত তথ্য চাইতে কয়েকজন সাংবাদিক ঢাকার আদালতে অবস্থিত দুদকের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখায় যান।
তাঁরা সংস্থাটির আদালত পরিদর্শক আমির হোসেনের কাছে তথ্য চাইলে তিনি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার বিষয়টি লুকান। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, দুদকের এ ধরনের তথ্য দেওয়া নিষেধ রয়েছে। পরে আদালত সূত্রে সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের বিষয়টি জানা যায়।
এ বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের জিআর শাখার উচিত সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়া, যাতে দেশবাসী দুর্নীতিবাজদের সম্পত্তির বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপের তথ্য জানতে পারেন। পুতুলের বিষয়টি গোপন রাখা রহস্যজনক বলে মনে করেন তিনি।