দেড় দশক আগে রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ তদন্তে গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্রয়োজনে দেশের বাইরে পলাতক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন কমিশনের সভাপতি ও বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান।
পিলখানায় এই বৈঠক হয়। বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হন এবং প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র পাঠানোর প্রস্তুতি নেন। পরে কমিশনের সভাপতি জানান, সরকারকে নিরাপত্তা, পরিবহন, অফিসসহ অন্যান্য সুবিধার জন্য চিঠি দেওয়া হবে। পরবর্তী বৈঠকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করাও কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব। এ জন্য সরকারের কাছে কিছু বাড়তি সুবিধা চাওয়া হবে।
ফজলুর রহমান বলেন, পলাতক ব্যক্তিরা কোথায় আছেন, কোন দেশে আছেন, তা খুঁজে বের করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। প্রয়োজনে ওই দেশের অনুমতি নিয়ে টিম পাঠিয়ে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া হবে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ওই ঘটনার পুনঃ তদন্তের দাবি উঠলে অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে। এই কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ফজলুর রহমান জানান, নিরপেক্ষভাবে এবং সময়সীমার মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হবে। কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্ব বা প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তিনি বিদ্রোহ-পরবর্তী নিপীড়িত, নিহত ও বঞ্চিত ব্যক্তিদের ক্ষতি নিরাময়ের প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন, কাজ শেষে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, সেই লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করবেন।
ওই বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞের পর বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) বিলুপ্ত করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নামে পুনর্গঠন করা হয়। কমিশনের মর্যাদার বিষয়ে কমিশনের প্রধান বলেন, কমিশনের সভাপতির মর্যাদা উপদেষ্টার সমান এবং সদস্যদের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির মর্যাদা দেওয়া প্রয়োজন। তিনি জানান, তাঁরা অন্ধকারে কাজ করতে চান না এবং সব তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে কাজ করবেন।
বৈঠকে কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাইদুর রহমান, সাবেক যুগ্ম সচিব মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, পুলিশের সাবেক ডিআইজি এম আকবর আলী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম অংশ নেন। অপর সদস্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহনেওয়াজ খান চন্দন বিদেশে গেছেন।