সংস্কার ও নির্বাচনের আগে প্রতিটি হত্যার বিচার করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি তাঁরা শহীদদের স্বীকৃতিরও দাবি করেন।
আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন যাত্রাবাড়ীতে নিহত ইমাম হাসান তাইমের ভাই মো. রবিউল আউয়াল।
এই তরুণ বলেন, দুই হাজার সন্তানের জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ঐক্য হবে, সংস্কার হবে, নির্বাচন হবে। কিন্তু তার আগে প্রত্যেকটা হত্যার বিচার করতে হবে। হত্যার সঙ্গে জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। এরপর তাদের বিচারের মুখোমুখি করে শহীদদের পরিবারের ন্যায্য দাবি মানতে হবে।
তিনি বলেন, ছয় মাস ধরে তিনি এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকটি হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে দৌড়াচ্ছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি অভিযোগ দিলেও তাঁর সেই অভিযোগ নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন। বিচার নামে রঙ্গমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।
তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন করেন, ‘ছয় মাসে কয়টা আসামি গ্রেপ্তার করেছেন? ২০০০ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মাত্র ৩৫ জন আসামি গ্রেপ্তার কি তাদের প্রাপ্তি? বিচার জন্য তো আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। আসামি যদি গ্রেপ্তার না হয়, তাহলে ফাঁসিটা দিবে কাকে? এই বিচার নামে রঙ্গমঞ্চ তৈরি করার মানেটা কী?
‘আমরা বিচারের জন্য হন্য হয়ে ঘুরতেছি। এই সরকার আমাদের। আমাদের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে যদি বিচারের জন্য যদি পদে পদে হেনস্তা হতে হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব?’
রবিউল আউয়াল আরও বলেন, ‘আমরা শহীদ পরিবারের প্রতিনিধি টিম গত রোববার গিয়েছিলাম ড. ইউনূস সাহেবের দরজায় ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে, উনার সহকারী সাব্বির ভাই বলল, গত ৩০ তারিখের মধ্যে আমাদেরকে দেখার ব্যবস্থা করে দেবে। উনি মেসেজ দিয়েছেন, ডক্টর ইউনূসের নাকি শহীদ পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সময় নাই। তাহলে বলেন, শহীদ পরিবার কোথায় যাবে? আমাদের কেন রাস্তায় নেমে আসতে হলো?’
এ সময় অন্তত যাত্রাবাড়ীতে নিহতসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দুই শতাধিক স্বজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু ছিলেন।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকা মহানগরীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে শাহাদাতবরণ করে দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস। একটি বুলেট তার বুকের বাঁ পাশ দিয়ে ঢুকে পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। আনাস সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে পড়ার টেবিলে মাকে উদ্দেশ করে একটি চিঠি লেখে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আনাসের মামা সাইদুর রহমান খান সাইদ বলেন, ‘এই সরকার আন্দোলনের ফসল। কিন্তু নিহত পরিবারের সদস্যদের কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। তারা কত কষ্টে আছে, সেই খবর কেউ নেয় না। পাশাপাশি বিচারেরও কোনো আলামত দেখছি না।’
নিহত সাংবাদিক মেহেদী হাসানের বাবা মোশারেফ হোসেন হাওলাদার শহীদ পরিবারগুলোর দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘নিহত পরিবারগুলো এক মুঠো ভাত চায়, একটি রুটি চায়, বাঁচার মতো বাঁচতে চায়, তা না হলে এই পরিবারগুলোকেও মেরে ফেলুন।’
ঢাকায় নিহত ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের নয়নের স্ত্রী রিনা বলেন, ‘আমার ছেলে প্রশ্ন করে বাবা কোথায়? আমি কোনো জবাব দিতে পারি না।’ এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমি কেন এখানে বিচারের দাবিতে আসব? আমি এ নিয়ে এখানে দুবার আসলাম। আমাদের কি বিচার চাইতে হবে? আমাদের পরিবার নিয়ে চলার ব্যবস্থা করে দিন?’