ভুয়া কাগজপত্র, ক্রিকেটের নাম ব্যবহার এবং ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়ায় অবস্থানসহ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ২২৮ জন বাংলাদেশি সহ ৬৪৫ অভিবাসীকে আটক করেছে মালয়েশিয়া সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা সংস্থা (একেপিএস)। আটককৃতদের ইমিগ্রেশন ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগসহ বিভিন্ন অপরাধে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়া নিরাপত্তা বাহিনী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুয়া কাগজপত্র ও কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে ৫১ জন বাংলাদেশিকে প্রবেশ করতে দেয়নি মালয়েশিয়া। বৃহস্পতিবার দেশটির কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হোটেল বুকিংয়ের নকল কাগজ ও ইমিগ্রেশন ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের আটক করে কর্তৃপক্ষ। মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার এ খবর জানিয়েছে।
মালয়েশিয়ার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা সংস্থা (একেপিএস) জানিয়েছে, বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের মধ্যে থেকে এলোমেলোভাবে ৬৭ জনকে তল্লাশি করার সন্দেহে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের ৫১ জনই কোনো না কোনো অপরাধে জড়িত। তাদের মধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তাদের চোখ এড়ানোর আশায় ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
একেপিএস আরও বলেছে, কয়েকজন তো ইমিগ্রেশন ফাঁকি দিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগের চেষ্টা করে। ফলে তাদের মালয়েশিয়ায় আগমনের আসল কারণ নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যায় কর্তৃপক্ষ। ইমিগ্রেশন অফিসারদের থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেছে কয়েকজন। অবশ্য তাদের ধরা হয়েছে।
আটক ব্যক্তিদের কাছে বিভিন্নরকম ভুয়া কাগজপত্র পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে একেপিএস। মালয়েশিয়ায় আগমনের সঠিক উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে।
একেপিএসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আটক ব্যক্তিদের অনেকে স্বীকার করেছেন, তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল একটি চাকরি জোটানোর চেষ্টা করা।
এদিকে, ক্রিকেটার সেজে মালয়েশিয়ায় প্রবেশকালে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৫ বাংলাদেশি আটক করেছে সে দেশের নিরাপত্তাবাহিনী। সোমবার তাদের আটক করে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা বিভাগ।
মঙ্গলবার একেপিএস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ক্রিকেট দলের ছদ্মবেশে ১৫ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা কালে তাদের আটক করা হয়। নিরাপত্তাবাহিনী জানিয়েছে, ১৫ জনের দলটি ক্রিকেট পোশাক পরে এবং টুর্নামেন্টের আমন্ত্রণপত্র উপস্থাপন করে কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল।
ভুয়া চিঠিতে ২১-২৩ মার্চ টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা থাকলেও, একেপিএস বলেছে, ২১ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত কোনো ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল না। এ ছাড়া সন্দেহজনকভাবে, তারা একজন স্পন্সরকে জামিনদার হিসেবে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে উপস্থিত ওই ব্যক্তি স্বীকার করেছেন, তার কাছে টুর্নামেন্ট সম্পর্কে কোনো তথ্য ছিল না এবং তিনি কেবল একটি কম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছিলেন।
তদন্তে আরও দেখা গেছে, তারা পেশাদার ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিল এমন কোনো দৃঢ় প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তারা খেলোয়াড়দের ছদ্মবেশে অন্য উদ্দেশে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের জন্য একটি সিন্ডিকেটের অংশ ছিল। একেপিএস তাদের সবার বিরুদ্ধে “নট টু ল্যান্ড” (এনটিএল) ব্যবস্থা নিয়েছে এবং অভিবাসন বিধি অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাছাড়া মালয়শিয়ায় অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে ৮৫ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী। শনিবার স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটায় কেলাংমের একটি সেন্ট্রাল মার্কেটে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। অভিযানে মোট ৬৩০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার নিরাপত্তাবাহিনী।
ইমিগ্রেশন বিভাগের উপ-মহাপরিচালক (অপারেশনস) জাফরি এমবক তাহা বলেন, অভিযানে বিভিন্ন অভিবাসন অপরাধে ৬৩০ জন বিদেশিকে আটক করা হয়েছে এবং ৩২ জনকে তল্লাশির পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আটককৃতদের মধ্যে ১৭ থেকে ৫৭ বছর বয়সী ৬২৮ জন পুরুষ এবং দুইজন নারী রয়েছে। যার মধ্যে ৫৩০ জন মিয়ানমার নাগরিক, ৮৫ জন বাংলাদেশি, ৯ জন ইন্দোনেশিয়া, ৫ জন ভারতীয় এবং ১ জন নেপালি অবৈধ অভিবাসী রয়েছেন। তদন্তের জন্য আটককৃত সবাইকে সেমেনিহ ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন।
ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়া প্রবেশকালে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করেছে দেশটির সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা (একেপিএস)। একই অভিযানে নয়জন পাকিস্তানিকেও আটক করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে একেপিএস জানিয়েছে, বিমানবন্দরের এক প্রবেশপথে অভিযান চালিয়ে ১১৫ জন বিদেশি নাগরিকের কাগজপত্র যাচাই করা হয়। যাচাইয়ের সময় দেখা যায়, ৩৬ বাংলাদেশি ও নয়জন পাকিস্তানি মালয়েশিয়ায় প্রবেশের শর্ত পূর্ণ করতে পারেননি।
এছাড়াও মালয়েশিয়ার মেলাকা প্রদেশের তিনটি শহরে ইমিগ্রেশন বিভাগের অভিযানে ১০১ জন বাংলাদেশি আটক হয়েছেন। বৈধতার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তাদের আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার এক চিরুনি অভিযানে তাদেরকে আটক করা হয়।
অবৈধ অভিবাসীদের আটক করতে মেলাকা প্রদেশের কেলেমাক, আলোর গাজাহ এবং তামান দেসা বারতান শহরের মোট ৯টি স্থানে অপারেশন সাপু এবং অপারেশন সেলারা পরিচালনা করে ইমিগ্রেশন বিভাগ। এ সময় মোট ১৩৪ জন বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়।
মেলাকা ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক আনিরওয়ান ফাউজি মোহা. আইনি বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগ এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আমাদের কাছে তথ্য ছিল এসব এলাকায় নির্মাণ শিল্পে কাজ করা অবৈধ বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। সেখানে বিদেশিদের উৎপাতের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সে অভিযোগের ভিত্তিতেই এ অভিযান পরিচালনা করে মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী।