Homeজাতীয়তিস্তায় যুক্ত হচ্ছে চীন

তিস্তায় যুক্ত হচ্ছে চীন


বাংলাদেশে তিস্তা নদীসহ পানিসম্পদ খাতের সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হবে চীন। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা অভিন্ন নদী যমুনার উজানে পানিপ্রবাহের বিষয়ে তথ্য দেবে দেশটি। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের শীর্ষ বৈঠকে গতকাল শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া চীনের পানিসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস বাংলাদেশের নদী ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য দেশটির কাছ থেকে ৫০ বছরের একটি মাস্টারপ্ল্যান চেয়েছেন।

এশিয়ার বোয়াও ফোরামে যোগদান ও দ্বিপক্ষীয় সফরের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বুধবার চীনে যান। ফোরামে অংশ নেওয়ার পর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, উপরাষ্ট্রপতি হান ঝেং, উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং শ্যুয়েশিয়াং, পানিসম্পদমন্ত্রী লি গোইয়িংয়ের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি অনুষ্ঠানে চীনের বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশে উৎপাদনমুখী শিল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বিনিয়োগ, টেকসই অবকাঠামো ও জ্বালানি, সামাজিক ব্যবসা ও তরুণ উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশের উৎপাদন খাত ও বাজারজাতকরণের সুযোগের বিষয়ে আরও তিনটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

প্রধান উপদেষ্টার সফরের ওপর গতকাল প্রকাশিত যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনঃ সংস্কার প্রকল্পে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণকে বাংলাদেশ স্বাগত জানায়। উভয় পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও সমুদ্র অর্থনীতি বিষয় সংলাপ আয়োজন ও সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়।

চীনের ইয়ারলুং জাংবো নদী ভারতে ব্রহ্মপুত্র ও বাংলাদেশে যমুনা নামে বয়ে চলেছে। নদীর চীনের অংশের পানিপ্রবাহের তথ্যবিনিময়, বাংলাদেশে নদী খনন, পানিসম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, বন্যাপ্রতিরোধ ও দুর্যোগ হ্রাসের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে দেশটি সম্মত হয়।

উভয় পক্ষ পরস্পরের মূল স্বার্থ ও উদ্বেগের বিষয়ের প্রতি সমর্থন দেওয়া, ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব এগিয়ে নেওয়া, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিশ্বাস দৃঢ় করা, উন্নয়ন কৌশলের সমন্বয় করা ও সামগ্রিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব সংহত ও গভীর করতে একমত হয়। ইউনূস ও সি দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ও আলোচনায় আনেন।

২১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, এবারের সফরে চীনের সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাংলাদেশ মোট ২১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।

৩০টি চীনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে চীনের বিশেষ শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। আর চীন মোংলা বন্দর আধুনিক করার প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার, অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫ কোটি ডলার ও প্রযুক্তি সহায়তা হিসেবে ১৫ কোটি ডলার প্রদানের পরিকল্পনা করেছে। বাকি অর্থ আসবে অনুদান ও অন্যান্য ঋণসহায়তা হিসেবে।

উভয় পক্ষ দ্রুত দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ও চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ চুক্তি সইয়ের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়।

বাংলাদেশ থেকে আমসহ বিভিন্ন কৃষি ও জলজ পণ্য আমদানি ত্বরান্বিত করতেও চীন সম্মত হয়।

এক চুক্তি, আট সমঝোতা সই

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের সফরে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার একটি চুক্তি সই হয়। এ ছাড়া, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের কালজয়ী সাহিত্যের অনুবাদ, শিল্পকর্মের সৃজন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খবর আদান-প্রদান, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বিনিময়।

দুই দেশ পাঁচটি বিষয়ে সহযোগিতার জন্য আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। বিষয়গুলো হলো বিনিয়োগের আলোচনা শুরু করা, বাংলাদেশে চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু করা, মোংলা বন্দরকে আধুনিক ও সম্প্রসারণ করা, একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং হৃদ্‌রোগে অস্ত্রোপচারের সুবিধা রয়েছে, এমন একটি গাড়ি অনুদান হিসেবে প্রদান।

রোহিঙ্গা সমস্যা

রোহিঙ্গা সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায় চীন। এ ক্ষেত্রে চীন তার সামর্থ্যের সর্বোচ্চ সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়।

অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন

চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়, চীন অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনে চলে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে শ্রদ্ধা করে। বাংলাদেশের জনগণের নিজস্ব বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্বাধীন উন্নয়ন পথনির্ধারণকে চীন সম্মান করে। অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর শাসন পরিচালনা, জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে চীন সমর্থন দেয়।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ‘এক চীন’ নীতির প্রতি সমর্থন জানায় ও তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে।

চীনের প্রেসিডেন্ট বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই), বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ (জিএসআই) ও বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগে (জিসিআই) যুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে আহ্বান জানান। বাংলাদেশ এ বিষয়গুলো বিবেচনার কথা জানায়।

পিকিং ইউনিভার্সিটি আজ শনিবার নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক বিশেষ ডিগ্রি দেবে। প্রধান উপদেষ্টার আজ ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত