বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ২ এপ্রিল থেকে নতুন শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পূর্ব এশিয়ার তিন শীর্ষ অর্থনীতির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একজোট হয়েছেন। বাণিজ্য যুদ্ধের চাপ বাড়তে থাকায় চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও আনুষ্ঠানিক আলোচ্য সূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি সরাসরি অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তবে এ বিষয়ে আলোচনা হওয়া ছিল অনিবার্য।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে বহুমুখী ও মুক্ত বাণিজ্যের ধারা বজায় রাখার আহ্বান জানান। অন্যদিকে, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বললেও, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির বিষয়ে তার চাপা উদ্বেগ প্রকাশ পায়।
ঐতিহাসিকভাবে চীন ও জাপানের সম্পর্ক খুব একটা বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পরিশোধিত পানি ছাড়ার সিদ্ধান্তের পর চীন জাপান থেকে সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে, যা এখনও বহাল রয়েছে। এছাড়া, পূর্ব চীন সাগরের বিতর্কিত দ্বীপের মালিকানা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে। উভয় দেশই অঞ্চলটিতে নিয়মিত টহল জাহাজ ও বিমান পাঠায়।
তবে অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে দুই দেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা অত্যন্ত গভীর। চীন জাপানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, এবং জাপানের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের বাজারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মার্কিন শুল্ক যুদ্ধের প্রভাবে ছয় বছরে প্রথমবারের মতো সরাসরি অর্থনৈতিক আলোচনা শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে চীন ও জাপান।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারও চীন। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে দক্ষিণ কোরিয়া চীনের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তবে উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক অস্ত্র পরীক্ষা এবং ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সহযোগিতার বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের উদ্বেগ রয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বৈরী অবস্থানের তুলনায় চীনের অবস্থান অনেকটাই নমনীয়। চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও অর্থনৈতিক শুভাকাঙ্ক্ষী। বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির প্রভাবে পূর্ব এশিয়ার তিন শীর্ষ অর্থনীতি চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া একজোট হয়েছে। বাণিজ্য যুদ্ধের চাপ, আঞ্চলিক উত্তেজনা এবং উত্তর কোরিয়া ইস্যু মিলিয়ে এই অঞ্চলের দেশগুলো একসাথে সমাধানের পথ খুঁজছে। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে চীন তার অবস্থান শক্তিশালী করতে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে।