Homeজাতীয়ট্রাম্পের আমলে বাংলাদেশ নিয়ে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে

ট্রাম্পের আমলে বাংলাদেশ নিয়ে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে


যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী মনোযোগের কারণ— যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনও সিদ্ধান্ত সবার ওপরে প্রভাব ফেলে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি প্রযোজ্য। কারণ তিনি কখন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, আগাম করে কোনও কিছুই বলা যায় না।

প্রথম মেয়াদের মতো (২০১৭-২০) দ্বিতীয় মেয়াদেও আশা করা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজস্বভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নীতির পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন, নাগরিক অধিকার ও উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত নীতির প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণীতেও।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। স্বভাবতই ব্যবসায়িক মনোভাবের কারণে তিনি  কখনোই পেশাদার রাজনীতিদের মতো আচরণ করবেন না।’

ট্রাম্প কয়েকটি বিষয়ে ইতোমধ্যে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন জানিয়ে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বাসই করেন না। সে কারণে আগের মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে প্যারিস চুক্তি থেকে বের হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।’

জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য বাঁচা-মরার প্রশ্ন। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তি যদি জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব না দেয়, তবে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের আগের মেয়াদেও এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এ ধরনের ধাক্কার জন্য বাংলাদেশকে তৈরি থাকা প্রয়োজন।’

উন্নয়ন সহযোগিতা

প্রতি বছর বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহযোগিতা হিসেবে প্রায় ২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এই তহবিল বিভিন্ন ধরনের কোমল বিষয়, যেমন- স্বাস্থ্য, সুশাসনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয়। নতুন প্রেসিডেন্টের মনোভাব থেকে ধারণা করা যায়, এ ধরনের খরচ কমাতে চাইবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এ বিষয়ে আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘ব্যবসায়িক মনোভাবের কারণে রাষ্ট্রীয় সম্পর্কে লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার প্রতি বেশি মনোযোগী হতে পারেন ট্রাম্প।’

মার্কিন উন্নয়ন সহযোগিতা সাধারণত শর্তযুক্ত হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন অর্থ আগামী দিনে কমে যেতে পারে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে অর্থ ব্যয় করে, সেটিও কমে আসতে পারে।’

নাগরিক অধিকার

যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট সরকারের আমলে নাগরিক অধিকার, যেমন- গণতন্ত্র, সুশাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ অন্যান্য বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিগত ট্রাম্প সরকারের আমলে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা কমে আসে। কারণ তার আমলে মানবাধিকারের বিষয়গুলো তেমন একটা গুরুত্ব পায়নি।

এ বিষয়ে আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘নাগরিক অধিকারের বিষয়গুলো রিপাবলিকান দল তুলনামূলক কম গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এই গুরুত্ব আরও কম।’

নতুন রাষ্ট্রদূত

গত বছরের প্রথম দিকে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকা ত্যাগ করেন। এরপর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে চীনে দায়িত্বরত মিশন উপপ্রধান ডেভিড মিলির নাম ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে ডেভিড মিলির ঢাকা আসার সিদ্ধান্ত বদল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায় যে ডেভিড মিলির বদলে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের বিষয়টি ঢাকাকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিককে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত করে সম্প্রতি ঢাকায় পাঠিয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি জানুয়ারিতে মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন ঢাকায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ

বাংলাদেশে নতুন মার্কিন বিনিয়োগ আসা এবং বাণিজ্য বাড়ার সম্ভাবনাও অত্যন্ত কম।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হচ্ছে স্থিতিশীল পরিবেশ, যেটি বাংলাদেশে এখন সেভাবে বিরাজ করছে না। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগের পরিবেশ কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে।’

যারা বিনিয়োগ করেছেন, তারা কম বিনিয়োগ এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমনকি নতুন রাজনৈতিক সরকার আসার পরেও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা অন্তত কিছু দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন।’

বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সক্ষমতার একটি সীমারেখা রয়েছে। আমাদের এখানে যদি অন্য দেশের রফতানি আদেশ চলেও আসে, সেটিকে সময় মতো সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাক্টরি, লোকবল, অবকাঠামোসহ অন্যান্য সক্ষমতার অভাব আছে। ফলে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের আগ্রহ এবং ক্রয়াদেশ সংগ্রহের ওপর বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করবে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত