Homeজাতীয়ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করে যেভাবে বাংলাদেশের উপকার করলেন মোদি!

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করে যেভাবে বাংলাদেশের উপকার করলেন মোদি!


ভারত সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশী পণ্য আর ভারতীয় ভূমি ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে রপ্তানি করা যাবে না। এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভারতের কোনো তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি ভারতের জন্যই বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।  

 

এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশকে মূলত দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমত, বাংলাদেশ এখন থেকে ভারতের ভূমি ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানের সাথে সরাসরি বাণিজ্য করতে পারবে না। যদিও ভারত দাবি করছে যে এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান বাণিজ্যে সরাসরি কোনো বাধা তৈরি হবে না, তবে বাস্তবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে রপ্তানি করা হতো, যা এখন বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে বাংলাদেশকে তার রপ্তানি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে হবে।  

 

বাংলাদেশ এই সংকট মোকাবিলায় বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। প্রথমত, দেশটি ঢাকা ও সিলেট বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা বাড়িয়ে তার রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার বন্দর ব্যবহার করে তার পণ্য রপ্তানির নতুন রুট তৈরি করতে পারে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ মালদ্বীপের বন্দর ব্যবহার করে রপ্তানি শুরু করেছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। তৃতীয়ত, নেপাল ও ভুটানের সাথে বাণিজ্যে সাময়িক বিঘ্ন ঘটলেও এটি বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না, কারণ এই বাজারগুলো তুলনামূলকভাবে ছোট।  

এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত নিজেদেরই অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বার্থকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। বর্তমানে ভারত বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভোগ করছে, বিশেষ করে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে (সেভেন সিস্টার্স) পণ্য পরিবহনের জন্য। বাংলাদেশ যদি পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতকে প্রদত্ত এসব সুবিধা বাতিল বা সীমিত করে দেয়, তাহলে ভারতের জন্য পণ্য পরিবহনের খরচ ও সময় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। এছাড়া, বাংলাদেশ চাইলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।  

 

এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সহযোগিতা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। কিন্তু এই ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত আস্থার সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে। বাংলাদেশ এখন ভারতের দেওয়া ট্রানজিট সুবিধাগুলো পুনর্বিবেচনা করতে পারে অথবা ভবিষ্যতে কোনো চুক্তি নবায়নের সময় শর্তসাপেক্ষে আলোচনার মাধ্যমে নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করতে পারে।  

 

মোটের ওপর, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য স্বল্পমেয়াদে কিছু অসুবিধা তৈরি করলেও, দেশটি দ্রুতই এর সমাধান খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে, এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত নিজেই তার কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত ভারতের জন্যই বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, বিশেষ করে যদি বাংলাদেশ পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। তাই, ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই একটি ভুল পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, যা ভারতকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে দিতে পারে।

 

 

সূত্র:https://youtu.be/hT3FlRjWsoQ?si=aXjIa4M9jkaVxpXy





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত