Homeজাতীয়টিকা সংকটে ওমরাহ যাত্রীরা বিপাকে

টিকা সংকটে ওমরাহ যাত্রীরা বিপাকে


হঠাৎ সৌদি আরব হজযাত্রীর মতোই ওমরাহ ও ভিজিট ভিসার যাত্রীদের জন্যও মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা বাধ্যতামূলক করায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ। কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সৌদি আরবের এ ধরনের আকস্মিক সিদ্ধান্তের দরুন এখন ঢাকায় দেখা দিয়েছে টিকা সংকট। হজযাত্রীদের সরকারিভাবে মেনিনজাইটিজ বিনামূল্যে দেওয়া হলেও ওমরাহ যাত্রীদের এ টিকা কিনে নিতে হচ্ছে। দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠান এ টিকা প্রস্তুত করলেও এখন পর্যন্ত শুধু ইনসেপ্টাই তা বাজারজাত করছে। যার দাম রাখা হচ্ছে এক হাজার টাকা। অভিযোগ রয়েছে এখন অনেক জায়গায় এ টিকারও সংকট দেখা দিয়েছে। পরিণামে ভিসা ও টিকিটের ব্যবস্থা নিশ্চিত হলেও অনেকেই টিকার সংকটে রমজানের আগে ওমরাহ করার সিদ্বান্ত বাতিল করছেন। এজেন্সিগুলোর অভিযোগ-ওমরাহ করতেও টিকা নিতে হবে- সৌদি সরকার এমন ঘোষণা এক মাস আগে দিয়েছে। আর ঢাকায় সেটা জানানো হয়েছে গত সপ্তাহে। অথচ বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এজেন্সি যোগাযোগ করলেও ধর্ম মন্ত্রণালয়  বলছে- এ দায় তাদের নয়।

জানা গেছে, সৌদি আরব গত সপ্তাহে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক  বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এ ওমরাহ ও ভিজিট ভিসার যাত্রীদের জন্য এ নোটিস জারি করে। ওই নোটিসে বলা হয়েছে, যারা ওমরাহ বা হজ করতে যাবেন  

অথবা ভিজিট ভিসায় সৌদি আরব যাবেন তাদের সবার জন্যই এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। সৌদি আরবে ভ্রমণের কমপক্ষে ১০ দিন আগে মেনিনজাইটিসের টিকা নিতে হবে। ভ্রমণের সময় সেই টিকা নেওয়ার সনদ সঙ্গে রাখতে হবে। এক বছরের নিচের শিশুদের এই টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কেউ যদি গত ৩ বছরের মধ্যে টিকা নিয়ে থাকেন- তাহলে তাকে সৌদি প্রবেশে নতুন করে টিকা দিতে হবে না। এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ম বাস্তবায়নের জন্য সৌদি আরবের সিভিল এভিয়েশন দপ্তর এরই মধ্যে সব এয়ারলাইন্সকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। এই টিকা ছাড়াও কয়েকটি দেশের ওমরাহ যাত্রীদের করোনাভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, পীতজ্বর এবং পোলিওর টিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য হজযাত্রীদের জন্য মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজস্ব বাজেট থেকে এ টিকা দিয়ে থাকে। এতে হজযাত্রী প্রতি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। তবে হঠাৎ করেই ওমরাহ এবং ভিজিট ভিসার যাত্রীদের জন্য সৌদি সরকার টিকা বাধ্যতামূলক করায় দুশ্চিন্তা-দুর্ভোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে এ টিকাই এখন দুর্লভ হয়ে গেছে।

জানা গেছে, নতুন ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ টিকা নিতে হবে যাত্রার অন্তত ১০ দিন আগে। সে হিসেবে বিনা টিকায় ওমরাহ করার সুযোগ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ জানুয়ারি। তারপর যারাই ওমরাহ কিংবা ভিজিজ ভিসায় সৌদি যেতে চান তাদের জন্য ওই টিকা বাধ্যতামূলক। এ অবস্থায় শুরু হয়ে গেছে টিকা নিয়ে ভোগান্তি। যদিও টিকার কোনো সংকট হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৮ জানুয়ারির পর থেকে মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার এই টিকা সহজেই মিলবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। তিনি জানান, সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে এই টিকা জেলা শহরেও পাওয়া যাবে। তবে এই টিকা সরকারিভাবে দেওয়া হবে না। অর্থাৎ প্রত্যেককে কিনে নিতে হবে টিকা। এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি টিকা ইনগোভ্যাক্স পাওয়াটা খুব কঠিন কিছু নয়। তিনি গণমাধ্যমকে আরও জানিয়েছেন. ওমরাহের ক্ষেত্রে যদিও আমরা টিকা কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা করছি, কিন্তু এটা সরকারিভাবে দেওয়া হবে না। বেসরকারিভাবে প্রত্যেককে কিনে নিতে হবে। আমরা ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করেছি। তাদের  তৈরি  ইনগোভ্যাক্স টিকাটি মাত্র এক  হাজার  টাকায় নেওয়া যাবে। তবে এর বাইরেও আরও অনেকগুলো কোম্পানির টিকা বাজারে রয়েছে। যে কেউ চাইলে একটু বেশি দামে অন্য যে কোনো টিকাও নিতে পারবেন। আমরা এ ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা রাখছি না।  

এদিকে হজ এজেন্সিগুলো জানিয়েছে, এ টিকা বাধ্যতামূলক করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেছে ভোগান্তি। এতদিন এ টিকা বাজারে না চললেও এখন শুরু হয়ে গেছে সংকট। চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে, আবার পাওয়াও যাচ্ছে না সর্বত্র। এদের সঙ্গে যোগ হয়েছে সৌদি প্রবাসীদেরও দুশ্চিন্তা। কে বা কারা রটিয়েছে, সৌদি প্রবাসী কর্মীদেরও এ টিকা বাধ্যতামূূলক। এতে অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে টিকা না পেয়ে গত মঙ্গলবার পান্থপথ এলাকায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনও করেন সৌদি প্রবাসীরা। পরে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয় প্রবাসী শ্রমিকদের টিকার বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু ওমরাহ যাত্রীরাও এ সংকট থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেইলি রোডের মাহমুদ জানান, তিনি সপরিবারে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ওমরাহ করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।  ভিসা ও বিমানের টিকিট কাটাও হয়ে গেছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এজেন্সির মাধ্যমে জানতে পারেন যে, যাত্রার ১০ দিন আগে তাকে মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিতে হবে। এ টিকার খোঁজ করতে গিয়ে কোনো কূল-কিনারা করতে পারেননি। এ অবস্থায় তিনি বিমানের টিকিট বাতিল করেন। তার মত উত্তরা শহীদ উল্লাহ, ইব্রাহিম খলিল রেজা ও মিরপুরের খোরশেদ আলমও উমরাহ যাবার সিদ্বান্ত বাতিল করেন।

এ টিকা নিয়ে সংকটের কথা জানিয়েছেন এজেন্সিগুলোও। কয়েকটি এজেন্সি মালিক জানান, এ টিকা নিয়ে শুধু সৌদিগামী যাত্রীরাই ভোগান্তিতে নয়, এজেন্সিগুলোও ক্ষতির মুখে পড়েছে। এয়ার টাচ এজেন্সির মালিক মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বলেছেন প্রথম প্রথম একটু জটিলতা হচেছ। তবে সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ ধর্মমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছ থেক্ েবিষয়টি আরও সহজলভ্য করা। যদিও এখন অনেকেই ফোনে জানতে চাচেছ। আমরা কোনো জবাব দিতে পারছি না। অনেকেই টিকিটের তারিখ পরিবর্তন করে জানুয়ারিতে আনতে চাচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যে বিমানগুলোর ফ্লাইট পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও দ্বিগুণের বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে টিকিট বাতিল করছেন।

এদিকে সৌদি সরকারের আকস্মিক ঘোষণায় উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় নিতে রাজি নয় ধর্মমন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে মন্ত্রণালয় সরাসরি যুক্ত থাকায় হজযাত্রীদের দুটি টিকা ফ্রি দেওয়া হয়। কিন্তু ওমরাহ ব্যবস্থাপনায় সরকার বা মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই এ বিষয়ে সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আর ওমরাহযাত্রীদের যাওয়া-আসার কোনো ক্ষেত্রেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি সৌদি সরকার বা দূতাবাসও এ নিয়ে অফিসিয়ালি তাদের কিছু জানায়নি। ফলে আগ বাড়িয়ে এ নিয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্তও নেবে না।

জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ওমরাহ সৌদি সরকার ও এদেশের এজেন্সিগুলো ব্যবসা করছে। এখানে ধর্ম মন্ত্রণালয় কোনোভাবে সম্পৃক্ত নয়। সৌদি সরকার ও দূতাবাসকে ধর্ম মন্ত্রণালয় বারবার বলেছে যে, যারা ওমরাহ করতে যাবেন- তাদের তথ্যগুলো যেন মন্ত্রণালয় পায় সেই ব্যবস্থা করা। শুধু তাই নয়, সবশেষে বলা হয়েছে যে, যারা ওমরাহ করতে যাবেন তারা মন্ত্রণালয়ের একটি ফরম পূরণ করে গেলেও সরকারের কাছে তথ্য থাকে। কিন্তু সেটি হয়নি। ফলে প্রতিবছর বা মাসে কতজন ওমরাহ করতে যান তার কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই।

ধর্মমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, এটা এত জটিল কিছু নয়। ওমরাহ হয়- ব্যক্তি আর সৌদি সরকারের মধ্যে। সৌদি সরকার ভিসা দেয়, আর ব্যক্তি টিকিট কেটে চলে যান। এখানে মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এখন টিকার ইস্যু সামনে আসতেই সবাই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করছে। আমরা তো টিকা আমদানি বা বিক্রি করি না। এটি করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ফলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এখানে কার্যত কিছুই করার নেই। তবে এ ইস্যু বড় হয়ে দাঁড়াবে না।

টিকার সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, সৌদি সরকারের আকস্মিক সিদ্ধান্তের দরুন এ জটিলতা দেখা দিয়েছে। যদিও আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই সবকিছু ব্যবস্থাপনা করে ফেলব। ইতোমধ্যে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করে দিয়েছি। টিকার জন্য মফলস্বল থেকে যাত্রীদের ঢাকা আসতে হবে না। সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে নিজ নিজ জেলাতেই টিকা নিতে পারবেন। আমরা সিভিল সার্জনদের মাধ্যমে আগেই টিকা নেওয়ার কেন্দ্র ঠিক করে দেব। আমরা এ মাসের শেষের দিকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে পারব। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে যাতে কারোরই খুব বেশি ভোগান্তি না হয়। আমরা তাদের পাসপোর্টের সঙ্গেই টিকা সার্টিফিকেটটি যুক্ত করে দেব। যাতে এয়ারপোর্টে পাসপোর্ট দেখিয়ে যাত্রীরা কোনো ভোগান্তি ছাড়াই চলে যেতে পারেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে- তাদের সঙ্গে টিকা নিয়ে ইসসেপ্টার সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক বাজারে সুলভ মূল্যে এটিকার সরবরাবহ নিশ্চিত করা হবে। চলতি সপ্তাহেই বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে এই টিকা কিনে নিয়েছে। রাজধানীর ল্যাবএইড, প্রাভা হেলথ, ভাইরোলজি ডিপার্টমেন্ট (বিএসএমএমইউ), প্রিভেন্টাসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন সেন্টারে এই টিকা পাওয়া যাচ্ছে। ইনসেপ্টার উৎপাদিত মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকার ব্র্যান্ড নাম হচ্ছে- ইনগোভ্যাক্স এসিডব্লিউওয়াই। ইনসেপ্টা নিশ্চিত করেছে তাদের কাছে এ টিকা পর্যাপ্ত আছে। গত সপ্তাহেই ৮ হাজার টিকা বাজারে ছাড়া হয়েছে। আরও প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টিকার মজুত রয়েছে।  প্রতিমাসেই ৪০ হাজার ডোজ টিকা তৈরি করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। কাজেই টিকার কোনো সংকট নেই।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত